বিষ্ণুপুরে তৎপরতা। মঙ্গলবার রাতে। নিজস্ব চিত্র।
করোনা পরিস্থিতিতে ‘নাইট কার্ফু’ কঠোর ভাবে বলবৎ করায় জোর দিচ্ছে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরে পুলিশ রাস্তায় নেমেছিল। পুরুলিয়ায় খুব ধীরে হলেও সংক্রমণ ফের বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে দিনের বেলায় কড়াকড়িতেও জোর দিচ্ছে পুলিশ। মঙ্গল ও বুধবার মাস্ক ছাড়া পথে বেরনো ৫১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগান।
পুরুলিয়ায় গত এক সপ্তাহে ‘অ্যাকটিভ কেস’ কিছু বেড়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষজ্ঞদের মতে, রাস্তাঘাটে অনেকেই যথেষ্ট সতর্কতা মেনে চলছেন না। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই পুরুলিয়া শহর-সহ হুড়া, পুঞ্চা, মানবাজার ১ ও আরও কয়েকটি ব্লক থেকে সংক্রমণ বাড়ার খবর এসেছে। জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘সংক্রমণ নামলেও ঢিলেমির কোনও জায়গা নেই। কোভিড সতর্কতা মেনে চলতে হবে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রের খবর, এখন রাজ্যের নিরিখে পুরুলিয়ায় সংক্রমণের হার অনেকটাই কম। এক সপ্তাহ আগে জেলার সংক্রমণের হার ছিল ০.১২ শতাংশ। রাজ্যে ১.৫৪ শতাংশ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলায় সংক্রমণের হার পৌঁছেছে ০.৫ শতাংশে। বুধবার জেলায় ‘অ্যাকটিভ কেস’ ছিল ৩৭টি। চলতি মাসের প্রথমে সংখ্যাটা ৪৭ থাকলেও দ্বিতীয় সপ্তাহে অর্ধেকের নীচে নেমে আসে। তৃতীয় সপ্তাহের গোড়ায় অ্যাকটিভ কেস শূন্যে নামলেও ফের বাড়তে শুরু করেছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে পাওয়া বুধবারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুরুলিয়া শহরে পাঁচটি, হুড়ায় ন’টি, পুঞ্চায় সাতটি ও মানবাজার ১ ব্লকে পাঁচটি ‘অ্যাকটিভ কেস’ রয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘গত পাঁচ-ছ’দিনে অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা বাড়ছে। যা উদ্বেগজনক।’’
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক তথা পুরুলিয়া মেডিক্যালের চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোভিড প্রথম ঢেউয়ের সময়ে স্বাস্থ্য-বিধি মানার প্রশ্নে জেলার মানুষকে অনেক সচেতন দেখেছিলাম। এখন পথেঘাটে অনেকের গা-ছাড়া ভাব দেখছি। এর ফল মারাত্মক হতে পারে।’’
এত দিন ‘নাইট কার্ফু’-তে জোর দিচ্ছিল পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, এ বার দিনের বেলাতেও পথে বেরোনো মাস্কবিহীন লোকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। বুধবার দুপুরে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া জাতীয় সড়কে হুড়ার লালপুর মোড়ে অভিযান হয়। দোকানদার থেকে পথচারী, মোটরবাইকের চালক থেকে সওয়ারি— মাস্ক ছাড়া পথে বেরিয়ে পুলিশের সামনে পড়েছেন অনেকে। বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয়। জেলার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগান জানান, দু’দিনে মাস্ক ছাড়া পথে বেরনো ৫১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অতিমারি আইনে ২২টি মামলা দায়ের হয়েছে।
অন্য দিকে, মঙ্গলবার রাতে বাঁকুড়া শহরে নাইট কার্ফু পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অভিযান চালান বাঁকুড়া সদর মহকুমা শাসক সুশান্ত কুমার ভক্ত, বাঁকুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিবেক বর্মা, ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) বিশ্বজিৎ নস্কর, বাঁকুড়া সদর থানার আইসি দেবাশিস পান্ডা প্রমুখ। পুলিশ জানিয়েছে, কার্ফু নিয়ম না মানায় পঞ্চাশজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে বিষ্ণুপুর মহকুমা পুলিশ ও প্রশাসন যৌথ অভিযান চালায়। ছিলেন এসডিও (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত ও এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) কুতুবউদ্দিন খান। রাত ৯টার পরেও রবীন্দ্র স্ট্যাচু মোড়ের গ্যাস ভরার একটি দোকান খুলে রাখার অভিযোগে এক জনকে আটক করা হয়। কলেজ রোডের বৈলাপাড়া থেকে সাড়ে ৯টার সময় হোটেল খুলে রাখায় অভিযোগে আটক করা হয় কর্মীদের। বৈলাপাড়া হয়ে কব্বরডাঙা দিয়ে শাঁখারিবাজারে পৌঁছয় পুলিশের গাড়ি। রাত সাড়ে ১০টার সময় অভিযান শেষ হয় লালবাঁধের পাড়ে। লালবাঁধ চত্বর অবশ্য ছিল শুনশান।
অন্য দিকে, বিষ্ণুপুর থানার পুলিশের আর একটি দল রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড হয়ে গোপালগঞ্জ, বোলতলা দিয়ে বড়কালীতলার দিকে নজরদারি চালায়। এসডিও (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত বলেন, “নাইট কার্ফু না মানার অভিযোগ আসছিল। সচেতন করতেই এই অভিযান।” এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) কুতুবউদ্দিন খান বলেন, “প্রায় ২০ জনকে দোকান খুলে রাখা ও অকারণে রাতে ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগে আটক করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’ তিনি জানান, বিশেষ প্রয়োজনে রাতে বেরনো লোকজনকে ছাড়া হয়েছে।