আমোপুরে ক্ষুদ্র দোকানদারদের হটিয়ে দিয়ে এই ভাবেই বেড়া দিয়ে নিজেদের জায়গা ঘিরে নিয়েছে রেল দফতর (বাঁ দিকে)। কিছু ব্যবসায়ী ব্যাটারি চালিত আলো লাগিয়ে ব্যবসা করছেন। ফের রেল উচ্ছেদ করবে ডিসেম্বরে (ডান দিকে)। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
বছর তিরিশেক ধরে আমোদপুর স্টেশন সংলগ্ন রেলের জায়গায় অস্থায়ী দোকানপাট করে দু'বেলা দুমুঠোর সংস্থান করছিলেন বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। মাঝেমধ্যে রেলের পদস্থ আধিকারিকদের আগমন উপলক্ষে সাময়িক ভাবে তাঁদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। দিন কয়েক পরেই পুরনো জায়গায় ফের দোকান খুলে বসেছেন তাঁরা। কিন্তু, মাস দুয়েক আগে তাঁদের উচ্ছেদ করে নিজেদের জায়গা বেড়া দিয়ে ঘিরে দিয়েছে রেল। এর ফলে জীবিকা হারিয়ে বিপন্ন হয়ে পড়েছেন ওইসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য মার্কেট কমপ্লেক্স গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আমোদপুর স্টেশন থেকে সিউড়ি-কাটোয়া সড়ক সংলগ্ন বড়মাকালী মন্দির পর্যন্ত আনাজ, মাছ, মাংস, ফল, চা ও তেলেভাজা-সহ বিভিন্ন অস্থায়ী দোকান ছিল তিন শতাধিক ব্যবসায়ীর। মাস দুয়েক আগে তাঁদের সরিয়ে জায়গাটি বেড়া দিয়ে ঘিরে দিয়েছে রেল। এর ফলে ওই ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। আনাজ ব্যবসায়ী মেঘু যাদব, ফল বিক্রেতা অপু সাহা বলেন, ‘‘আমরা পুরুষানুক্রমে রেলের জায়গায় অস্থায়ী দোকান করে সংসার চালাতাম। রেল আমাদের দোকানপাট ভেঙে দেওয়ায় জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়েছে।’’ স্থানীয় আইএনটিটিইউসি'র ব্লক সভাপতি (লাভপুর বিধানসভা ) নির্মল মণ্ডল জানান, প্রায় সাড়ে তিনশো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তাঁদের কেউ কেউ গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বেড়ালেও অধিকাংশই রোজগারহীন। অনটনে দিন কাটছে তাঁদের।
আইএনটিটিইউসি লাভপুরের বিধায়ক এবং প্রশাসনের কাছে পুর্নবাসনের দাবি জানিয়েছে। সেই দাবি মেনে সাঁইথিয়া পঞ্চায়েত সমিতি সংলগ্ন সরকারি জায়গায় মার্কেট কমপ্লেক্স গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। ওই খবর জেনে ব্যবসায়ীরা খুশি। মোহন খাট্টিক, সুমন পালেরা বলেন, ‘‘পুনবার্সনের ব্যবস্থা না-হলে আমাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে অনাহারে মরতে হবে।’’
সাঁইথিয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রশান্ত সাধু জানান, মার্কেট কমপ্লেক্স গড়ার জন্য ১৭০ শতক জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে। মার্কেট কমপ্লেক্স না হওয়া পর্যন্ত উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের ওই জায়গায় ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্নাকে আমি মার্কেট কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি জেলা প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ করতে বলেছেন। আশা করি শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।’’
রামপুরহাটেও পুনর্বাসনের দাবি উঠেছে। মাস ছয়েক আগে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করেছে রেল। তিন শতাধিক দোকান উচ্ছেদ হয়েছিল। কোনও পুনর্বাসন দেওয়া হয়নি। এখন ব্যবসায়ীরা স্থায়ী চালাঘর না তৈরি করে রেলের জায়গাতেই অস্থায়ী ভাবে টেবিল পেতে বিক্রিবাটা করছেন। মাঝে মাঝে রেলের লোক এসে দোকানিদের উচ্ছেদ করার বা দোকান সরিয়ে নিয়ে যেতে বলে। শহরে ফুটপাত উচ্ছেদ বিরোধী যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে একাধিকবার রেলের কাছে পুনর্বাসনের আবেদন জানিয়েছেন দোকানিরা। কিন্তু, রেলের তরফে আশ্বাস মেলেনি বলে তাঁদের অভিযোগ। বরং আগামী ৭ ডিসেম্বর শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে রেলের জায়গা থেকে অস্থায়ী দোকান উচ্ছেদ করা হবে বলে নোটিস দিয়েছে রেল। আমোদপুরের মতো এখানেও ওই ব্যবসায়ীদের জন্য বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করার দাবি উঠেছে।