বক্তা: পুরুলিয়ার জয়পুরের আরবিবি স্কুল ময়দানে। নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূলের প্রতিপক্ষ বিজেপি হয়ে উঠলেও পুরুলিয়ার জয়পুরে যে তাদের সমর্থন কোনও অংশে কম নয়, শনিবার দলের প্রদেশ সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর মিছিল ও সভায় দলীয় কর্মীদের ভিড়ের সূত্রে, তেমনই দাবি করল জেলা কংগ্রেস।
এ দিন দুপুরে চাষমোড়-তুলিন রাজ্য সড়কের জয়পুরের জলট্যাঙ্ক মোড় থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। জয়পুর বিধানসভা এলাকার এই কর্মসূচিতে কর্মী-সমর্থকদের ভিড় দেখে আড়াই কিলোমিটার পদযাত্রা শেষে জয়পুর আরবিবি হাইস্কুল ময়দানের সভায় অধীর বলেন, ‘‘আজকের এই বিশাল উপস্থিতি শুধু আমাকে নয়, সারা বাংলার কংগ্রেস কর্মীদের আগামী দিনে লড়াই করার জন্য উৎসাহিত করবে। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আপনাদের অভিনন্দন জানাই। পশ্চিমবঙ্গকে কারা যেন নিজেরাই টিএমসি আর বিজেপির মধ্যে ভাগ করে দিচ্ছিল। যাঁরা বলছিলেন, কংগ্রেসকে পশ্চিমবঙ্গে গুনতির মধ্যে আনার দরকার নেই, আজ তাঁদের এই মিছিল এবং এই সভা জানান দিচ্ছে যে কংগ্রেস বাংলার মানুষের আশীর্বাদ-দোয়া নিয়ে তাঁর নিজের শক্তির, নিজের অস্তিত্বের পরিচয়ের প্রকাশ ঘটাচ্ছে।’’ আগামী বিধানসভা ভোটে জয়পুর কংগ্রেস দখল করবে বলে অধীর দাবি করেন।
এ দিনের ভিড় স্বস্তি দিয়েছে জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বকেও। বাঘমুণ্ডি কেন্দ্রের বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো দাবি করেন, ‘‘এই বিশাল মহামিছিল শুধু জয়পুর বিধানসভা কেন্দ্রের মানুষকে নিয়ে করা হয়েছে।’’ অধীর জানান, রাজ্যের অন্যত্রও দলের মহামিছিল হবে। কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, ভিড় করেছিলেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ। যদিও পুলিশের হিসেবে, ভিড় হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার।
এ দিনের পদযাত্রা ও সভা সংগঠিত করার জন্য জয়পুর বিধানসভার নেতা ফণিভূষণ কুমারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অধীর। ছিলেন পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়, জেলা কংগ্রেস নেতা উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।
কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে অধীর দাবি করেন, ‘‘কংগ্রেস দেশে খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু করেছিল। আর বিজেপি বলছে, রেশন ব্যবস্থা তুলে দাও।’’ নেপালবাবু প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আদালতের রায়ের পরে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সমস্ত নথিপত্র পাঠানো সত্ত্বেও আজও পুরুলিয়ার পরিযায়ী শ্রমিকেরা তাদের জন্য নেওয়া বিশেষ প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এর জবাব চাই।’’ রাজ্য সরকারের দুয়ারে সরকার কর্মসূচিকে কটাক্ষ করে নেপালবাবু বলেন, ‘‘মানুষ দুর্নীতির কারণে এতটাই বীতশ্রদ্ধ যে সরকারি অফিসে যাচ্ছেন না। তাই ওই কর্মসূচি নিতে হচ্ছে।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘বিজেপি রাস্তায় নেমে প্রতিদিনই মানুষের নানা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে। ওই প্রকল্পে কেন পুরুলিয়া বঞ্চিত, সে জবাব রাজ্য সরকারকেই দিতে হবে? নেপালবাবু তৃণমূলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে, হঠাৎ করে কেন্দ্রের ঘাড়ে কেন দোষ চাপাচ্ছেন, স্পষ্ট নয়।’’ তবে তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র নবেন্দু মাহালি দাবি করেন, ‘‘কোথায় দুর্নীতি, নির্দিষ্ট ভাবে ওরা বলুন। মানুষের কথা শুনতে বছরভর আমাদের সরকার নানা কর্মসূচি নিচ্ছে।’’
এ দিনের সভায় স্বাস্থ্য-বিধি বজায় রাখার জন্য পদক্ষেপ করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন জয়পুরের কংগ্রেস নেতা ফণীভূষণ কুমার। তিনি জানান, সামাজি দূুরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক পরার জন্য কর্মীদের বার বার বলা হয়েছিল। তাঁর দাবি, প্রায় সমস্ত কর্মীই তা মেনে চলেছেন।