ঘটনাস্থল: মেঝেয় তখনও রক্তের দাগ। চুরির চিহ্নও স্পষ্ট। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
ঘরের মেঝেতে রক্তমাখা পায়ের ছাপ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাচের টুকরো। কাচের জানালা ভেঙে চোর নিয়ে গিয়েছে ঘরোয়া জিনিসপত্র সঙ্গে কিছু টাকা। এমনটাই দাবি স্থানীয়দের। যদিও চুরির থেকে চোরের অধ্যাবসায় নিয়ে চর্চা হয়েছে বেশি।
মঙ্গলবার সাতসকালে শান্তিনিকেতনের দমদমা গ্রামে একতলা বাড়িটার সদর দরজায় ভাঙা তালা ঝুলতে দেখেই মনে কু ডেকেছিল তুহিনশুভ্র দে’র। তিনিই এই বাড়িটির কেয়ারটেকার। বাড়ির মালিক পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বিদেশে থাকেন। পুলিশ জানায়, প্রতিদিনের মতো তুহিনবাবু সকালে এসে বাড়ির দরজা খুলতে গিয়ে দেখেন তালা ভাঙা। ঘরের ভিতরে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে আছে জিনিসপত্র। দেওয়াল থেকে উধাও বাল্ব, সিলিং-এ ফ্যান নেই, বাথরুমে থাকা গিজার, রান্নাঘরে পানীয় জল পরিশোধনের যন্ত্র সব গায়েব। আলমারিও ভাঙা। সেখান থেকেও যেটুকু টাকা ছিল তা নেই বলেই তাঁর অনুমান।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, শেষ রাতে চোর যখন ঢুকেছিল অন্ধকারে কোনও ভাবে কাচ ভাঙে ঘরের মধ্যে। সেই ভাঙা কাচে চোরের পা কেটে রক্তাক্ত হলেও চুরিতে ক্ষান্ত দেয়নি সে। কাটা পা নিয়েই বাড়িময় দাপিয়ে বেড়িয়েছে। জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে তারপর চম্পট দিয়েছে।
দমদমা গ্রামটি শান্তিনিকেতন থানার স্বর্পলেহনা আলবাঁধা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। মূলত আদিবাসী পাড়া। এখানে চুরির ঘটনা আগে না ঘটলেও শান্তিনিকেতনে বাড়ি ফাঁকা থাকার সুযোগে একাধিকবার চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবারই বোলপুরের স্কুল বাগান এলাকায় এক মহিলার গলা থেকে হার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তার কিনারা এখনও পুলিশ করে উঠতে পারেনি। একটু পিছনে ফিরলেই দেখা যাবে, গত বছরই ছ’মাসের মধ্যে শান্তিনিকেতন এলাকায় ডজনখানেক বাড়ি ও পাড়ুইয়ের একটি স্কুলে পরপর দু’বার চুরির ঘটনা ঘটে।
চাঁদা তোলার নাম করে ৭৯ বছরের বয়সী এক বৃদ্ধার বাড়িতে ঢুকে গলায় ছুরি ঠেকিয়ে সর্বস্ব লুট করে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল। এছাড়া শান্তিনিকেতনের রাস্তা ফাঁকা থাকার সুযোগ নিয়ে অন্ধকারে কলেজ ছাত্রীর শ্লীলতাহানি থেকে ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা তো ভুরিভুরি। গত ডিসেম্বরে ৮৪ জনকে গ্রেফতার করে বীরভূম জেলা পুলিশ। বেশ কিছু চুরি যাওয়া সামগ্রীও উদ্ধার হয়।
তারপর আবার কিছুদিন চুরি-ছিনতাই বন্ধ থাকলেও এই লকডাউনের সময় চুরির প্রকোপ বেড়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চোরেরা আগে থেকে খবর নিয়ে চুরি করেছে বলে ধরা পড়ার পরে জানা গিয়েছে।
দমদমার ঘটনাও স্থানীয় চোরেদেরই কাজ বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই কেয়ারটেকারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। পা কাটলেও, চুরি করতে ঢুকে খালি হাতে ফিরতে চায়নি চোর!’’ আর তুহিনশুভ্রবাবু বলেন, ‘‘এলাকাতেই থাকি, এমন ঘটনা ঘটবে ভাবিনি। বাড়ির মালিককে জানিয়েছি সব। এখন পুলিশ ভরসা।’’