ডাইনি সন্দেহে গ্রামছাড়া পরিবার। প্রতীকী চিত্র।
মাস খানেক আগেই জেলায় ডাইন অপবাদ দিয়ে আদিবাসী দম্পতিকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে। তার পর প্রশাসন তৎপর হওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কুসংস্কারের দাপট ঠেকানো যাচ্ছে না।
প্রায় তিন বছর কেটে গেলেও এখনও গ্রামে ফেরানো যায়নি ডাইনি অপবাদ দিয়ে ঘরছাড়া করা আদিবাসী পরিবারের ১৪ জন সদস্যকে। শুক্রবার রাতেও ওই পরিবারের সদস্যরা ও তপশিলি জাতি-জনজাতি, অন্য অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু যৌথ মঞ্চের সভাপতি বৈদ্যনাথ সাহা বোলপুরের এসডিপিওর সঙ্গে দেখা করেন। এসডিপিও আশ্বাস দিলেও তাঁদের গ্রামে ফেরাতে পুলিশ উদ্যোগী হচ্ছে না বলে আক্রান্তদের অভিযোগ।
বীরভূমের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “এখানে আসার পরে আমি বিষয়টি শুনেছি। দ্রুত যাতে ওই পরিবারকে গ্রামে ফেরানো যায় তার ব্যবস্থা করা হবে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে বোলপুর থানার সিয়ান মুলুক গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মণিকুণ্ডুডাঙা গ্রামে হঠাৎ করে বেশ কিছু মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন ও গ্রামের মোড়লের দু’টি ছাগল ও এক প্রতিবেশী যুবকের চারটি হাঁস মারা যায়। ওই পরিবারের অভিযোগ, গ্রামের মোড়ল সালিশি সভা বসিয়ে ওই আদিবাসী পরিবারের সদস্যদের গ্রামছাড়া করা নিদান দেন। এর পরেই গ্রামবাসীদের একাংশ ওই পরিবারের উপরে চড়াও হয়ে তাঁদের ডাইনি অপবাদ দিয়ে মারধর করে শিশু-সহ ১৪ সদস্যকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ। সেই থেকে আও তাঁরা ফিরতে পারেননি নিজেদের ভিটেয়।
বস্তুত, বীরভূমে এমন ঘটনা নতুন নয়। মাসখানেক আগেই সাঁইথিয়ার নোয়াপাড়ায় আদিবাসী দম্পতিকে ডাইন অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। তার পরে ডাইন অপবাদ ঠেকাতে তৎপরতার দাবি উঠেছিল। যুক্তিবাদীদের অভিযোগ, মণিকুণ্ডুডাঙার ঘটনাই প্রমাণ করে এখনও তৎপর হয়নি প্রশাসন। প্রায় তিন বছর ধরে কখনও খোলা আকাশের নীচে, কখনও আত্মীয়ের বাড়িতে দিন কেটেছে পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু এখনও তাঁরা গ্রামে ফিরতে পারেননি।গ্রামে ওই পরিবারের বাড়িতে লুটপাট চালানো থেকে শুরু করে গৃহপালিত পশু কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে গ্রামবাসীদের একাংশের বিরুদ্ধে। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসন থেকে শুরু করে মহকুমাশাসক, পুলিশ সুপার-সহ প্রশাসনের নানা স্তরে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি।
ওই পরিবারের এক মহিলা সদস্য বলেন, ‘‘প্রায় তিন বছর ধরে গ্রাম ছাড়া। পুলিশ-প্রশাসনকে বহুবার জানিয়েছি। কোনও লাভ হয়নি।’’ বৈদ্যনাথ সাহা বলেন, “প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ যতদিন না তাঁদের গ্রামে ফেরানো যায় তত দিন সরকারি জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করা হোক।” বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য কমিটির সদস্য শুভাশিস গড়াই বলেন, “ঘটনার পরে প্রায় তিন বছর পেরোতে চললেও পরিবারটি গ্রামে থাকতে পারছে না। তাই প্রশাসনকে সঠিক কারণ অনুসন্ধান করে ওই পরিবারকে দ্রুত গ্রামে ফেরাতে হবে।”