Pattachitra

৮৭ প্রজন্ম ধরে মল্লরাজাদের বড়, মেজ, ছোট ঠাকরুনের পটচিত্র আঁকে বাঁকুড়ার ফৌজদার পরিবার

৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ৮৭ প্রজন্ম ধরে সেই পট আঁকার কাজ চালিয়ে আসছে ফৌজদার পরিবার। প্রতি বছর পুজো এলেই তাই বাঁকুড়ার ফৌজদার পরিবারে শুরু হয় ব্যস্ততা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:০৯
Share:

তৈরি হচ্ছে পটচিত্র। — নিজস্ব চিত্র।

বাঁকুড়ার মল্লরাজ জগৎমল্লের হাত ধরে তৎকালীন মল্ল রাজধানী বিষ্ণুপুরে শুরু হয়েছিল দেবী মৃন্ময়ীর পুজো। ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ঘটে এবং পটে শুরু হয় সেই পুজো। পরবর্তী কালে মূর্তিপুজো শুরু হলেও, মৃন্ময়ীর মন্দিরে আজও হয়ে আসছে পটের পুজো। ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ৮৭ প্রজন্ম ধরে সেই পট আঁকার কাজ চালিয়ে আসছেন ফৌজদার পরিবারের সদস্যরা। প্রতি বছর পুজো এলেই তাই বাঁকুড়ার ফৌজদার পরিবারে শুরু হয় ব্যস্ততা।

Advertisement

বাংলার প্রাচীন দুর্গাপুজোগুলির মধ্যে অন্যতম বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজবাড়ির মৃন্ময়ীর পুজো। কথিত আছে, মল্লরাজ জগৎমল্ল শিকারে বেরিয়ে বিষ্ণুপুরে এসে দেখা পেয়েছিলেন দেবী মৃন্ময়ীর। এর পর সেখানে দেবীর পুজো শুরু করেন তিনি। পরে প্রদ্যুম্নপুর থেকে রাজধানী সরিয়ে তিনি নিয়ে আসেন বিষ্ণুপুরে। কথিত আছে, প্রথম কয়েক বছর ঘটে এবং পটে আঁকা দেবীর পুজো হয়। পরে গঙ্গামাটি দিয়ে মৃন্ময়ীর মুর্তি তৈরি করে শুরু হয় পুজো। এক হাজার বছরের প্রাচীন রীতি মেনে রাজকুলদেবীর এই পুজো আজও চলে আসছে।

দুর্গাপুজোর আগে জিতাষ্টমী তিথি থেকে শুরু হয় মৃন্ময়ী পুজোর। পুজোর দিন ‘বড় ঠাকুরুন’ নামে একটি হাতে আঁকা পট মন্দিরে আনা হয়। এর সাত দিন পর একই ভাবে মন্দিরে আনা হয় ‘মেজ ঠাকরুন’ নামে একটি পট। শেষে দুর্গাষষ্ঠীর দিন মন্দিরে নিয়ে আসা হয় ‘ছোট ঠাকরুন’ নামে আরও একটি পট। দুর্গাপুজোর দশমী তিথিতে নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে শেষ করা হয় পুজো। কিন্তু দশমীতে কখনই দেওয়া হয় না দেবীমূর্তির বিসর্জন। বিসর্জন হয় তিন পটের। সেই তিনটি পট আঁকার দায়িত্ব বরাবরই মল্ল সেনাপতি ফৌজদার পরিবারের উপরে। আজও পুজো এলেই ফৌজদার পরিবার ব্যস্ত হয়ে পড়ে রঙ, তুলি দিয়ে ক্যানভাসে তিনটি পট আঁকার কাজে।

Advertisement

পাপন ফৌজদার নামে ফৌজদার পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘‘আমরা ৮৭ প্রজন্ম ধরে মল্ল রাজপরিবারের কুলদেবী মৃন্ময়ীর পট এঁকে চলেছি। এ জন্য কোনও প্রথাগত অঙ্কনশিক্ষার প্রয়োজন হয় না। আমাদের পরিবারের সকলেই সহজাত ভাবেই এই পট আঁকা শিখে যান। এত প্রাচীন একটি শিল্পধারার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত রাখতে পেরে আমরা যথেষ্ট গর্বিত।’’ পুজোর আগে ফৌজদার পরিবার এখন ব্যস্ত মল্ল রাজকুলদেবীর পট আঁকায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement