মোল্লা সাহেব। নিজস্ব চিত্র।
সংরক্ষণের গেরোয় পড়ে মাঝেমধ্যে আসন বদলেছে। কিন্তু বদলায়নি দল। বদলায়নি প্রার্থী হওয়ার ‘রেওয়াজ’ও। এ বারও পঞ্চায়েত ভোটে বাঁকুড়া ১ নম্বর ব্লকের প্রবীনতম প্রার্থী হিসাবে টিকিট দিয়েছে শাসকদল তৃণমূল। ৭২ বছর বয়সেও সাইকেলে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে জনসংযোগ করতে দেখা গেল বাঁকুড়ার বাদুলাড়া গ্রামের মোল্লা সাহেবকে। এমন প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই যে বেশ কঠিন, প্রকাশ্যে তা মানছেন বিরোধী প্রার্থীও।
বাঁকুড়া ১ নম্বর ব্লকের বাদুলাড়া গ্রাম মূলত মুসলিমপ্রধান। এই গ্রামেই বসবাস আব্দুল মোতালেব মোল্লার পরিবারের। সরকারি নথিতে তাঁর এই নাম থাকলেও এলাকায় তাঁকে সকলেই চেনেন মোল্লা সাহেব নামে। এক সময় নিজস্ব বেকারির ব্যবসা ছিল মোল্লা সাহেবের। সঙ্গে ছিল কংগ্রেস রাজনীতির অলিন্দে অবাধ যাতায়াত। সেই সূত্রেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া। ১৯৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পৃথক দল গঠন করলে কংগ্রেস ছেড়ে মোল্লা সাহেব তৃণমূলে যোগ দেন। ব্যবসায় আঘাত আসতে পারে, এই আশঙ্কায় পরিবারের লোকজন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও সে কথায় কান দেননি মোল্লা সাহেব। উল্টে সেই বছরেই গ্রাম পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের প্রতীকে প্রার্থী হয়ে যান। জিতেও যান। তার পর থেকে লাগাতার ভাবে ২০০৩, ২০০৮, ২০১৩ ও ২০১৮ সালে জোড়াফুলের টিকিটে লড়াই করেছেন মোল্লা সাহেব। এর মধ্যে ২০০৩ সালের নির্বাচন বাদ দিলে বাকি সব গুলি নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন তিনি। এবার ফের তাঁকে স্থানীয় আচুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী করেছে তৃণমূল।
পরিবার সূত্রে খবর, মোল্লা সাহেবের বয়স ৭২ ছুঁয়েছে। শরীরে বাসা বেঁধেছে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন অসুখ। কিন্তু মনোনয়নের পর থেকে কার্যত নাওয়া-খাওয়া ভুলে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন মোল্লা সাহেব। এ বারও নিজের জয়ের ব্যাপারে বেশ প্রত্যয়ী তিনি। প্রচারের ফাঁকে মোল্লা সাহেব বলেন, “১৯৯৮ সাল থেকে আমি এলাকার মানুষকে পরিসেবা দিয়ে আসছি। এলাকায় যথেষ্ট উন্নয়নও হয়েছে। তা ছাড়া এলাকার মানুষ বিপদে-আপদে আমাকে সব সময় পান। এই সম্পর্কের জায়গা থেকেই আমি ফের নির্বাচিত হব। আমার সময় কালে তৃণমূলের কেউ কেউ দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালবাসি। তাই মৃত্যুদিন পর্যন্ত এই দলটাই করে যাব।”
তৃণমূল নেতৃত্বও মোল্লা সাহেবের জয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী। দলের বাঁকুড়া ১ নম্বর ব্লকের সভাপতি অংশুমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মোল্লা সাহেব বাঁকুড়া ১ নম্বর ব্লকে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাতাদের এক জন। তিনি বিভিন্ন সময় পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ার পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক পদও সামলেছেন। এখন বয়স হলেও মনের দিক থেকে তিনি এখনও বেশ নবীন। দল তাই তাঁকে প্রার্থী করেছে। তাঁর জয়ের ব্যাপারে আমরা ১০০ শতাংশ আশাবাদী।”
৭২ বছরের মোল্লা সাহেবের সঙ্গে নির্বাচনী ময়দানে লড়াই বেশ কঠিন, তা মানছেন সিপিএম এর প্রার্থী মহম্মদ মোহিত ইসলাম। তাঁর বক্তব্য, “মোল্লা সাহেব দীর্ঘ দিন এই আসনে জিতে আসছেন। স্বাভাবিক ভাবে লড়াই যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু মোল্লা সাহেব এত দিন পঞ্চায়েত সদস্য থাকার পরও গ্রামের মানুষ অনেক পরিসেবা থেকে বঞ্চিত। আমরা সেই বঞ্চনার কথাই প্রচারে মানুষের কাছে তুলে ধরছি। মানুষ আমাকে ভোট দিলে অবশ্যই উন্নয়ন হবে।”