প্রতীকী চিত্র
নিজের নামে জমির পরচা না থাকলে ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পে আবেদনই করতে পারবেন না চাষিরা। জমি সংক্রান্ত জটে আটকে সরকারি এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন বীরভূম জেলার অসংখ্য কৃষক। এমনই দাবি কৃষি দফতরের। কৃষি-কর্তাদের দাবি, আবেদন করেও বিভিন্ন ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে দ্রুততার সঙ্গে জমি সংক্রান্ত নথিপত্র সংশোধন করতে পারছেন না বহু কৃষক। প্রতিটি ব্লক ভূমি কার্যালয়ের কোথাও ৫ হাজার, কোথাও আরও বেশি কৃষকের আবেদনের নিষ্পত্তি হওয়া বাকি। সংখ্যাটা কমপক্ষে ৯০ হাজার!
অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) পূর্ণেন্দু মাজি অবশ্য বলছেন, ‘‘কৃষি দফতরের এই তথ্যের সঙ্গে আমি একমত নই। যত সংখ্যক কৃষকের আবেদনের নিষ্পত্তি হয়নি বলে বলা হচ্ছে, সেই সব তথ্য আমায় দেওয়া হলে কথা দিচ্ছি, এক পক্ষ কালের মধ্যে জমির রেকর্ড ঠিক করা হবে।’’
চলতি জানুয়ারিতে বোলপুরের প্রশাসনিক সভায় ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পে রবি ও খরিফ মরসুমে দু’দফায় একর প্রতি পাঁচ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হবে। যদিও অতিরিক্ত জমি থাকলেও অনুদানের অঙ্ক বাড়বে না। অন্য দিকে, এক একরের কম জমির জন্য আনুপাতিক হারে অনুদান নির্ধারিত হবে। ন্যূনতম অনুদানের পরিমাণ হবে এক হাজার টাকা। ১৮-৬০ বছর বয়সি কোনও কৃষকের স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক মৃত্যুতে তাঁর পরিবারকে সরকার এককালীন দু’লক্ষ টাকা অনুদান হিসেবেও দেওয়া হবে।
নিয়ম অনুযায়ী ওই প্রকল্পের সুবিধা পেতে হলে জেলার সমস্ত কৃষককে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। ব্লক কৃষি অফিস, পঞ্চায়েত অফিসে এমনকি মৌজায় শিবির করে কৃষকদের কাছে আবেদনপত্র সংগ্রহ করা হয়েছিল। সমস্ত পর্ব মিটিয়ে এই মুহূর্তে জেলায় প্রকল্পের সুবিধা পেতে শুরু করেছেন লক্ষাধিক চাষি। কিন্তু কৃষিকর্তাদের বক্তব্য, সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি হতে পারত, যদি ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার অফিস থেকে কৃষকদের আবেদনগুলির যথাসময়ে নিষ্পত্তি হতো।
ঘটনা হল, জেলার প্রত্যেকটি চাষি পরিবার জমির রেকর্ড সংক্রান্ত সমস্যা মিটিয়ে প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবেন কিনা, সে সংশয় প্রথম থেকেই ছিল। কারণ, ‘কৃষক বন্ধু’র শর্ত, প্রয়োজনীয় নথি ঠিক থাকলে তবেই চাষি এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন। বিশেষ করে নিজের নামে জমির পরচা না থাকলে আবেদনই করতে পারবেন না কোনও কৃষক। হতে পারে সরকার কৃষিজমির জন্য মিউটেশন ফি নেবে না। কিন্তু জমি চাষ করলে বা ভোগ দখলে থাকলেও কত শতাংশ কৃষকের নিজের নামে পরচা রয়েছে কিংবা কত দ্রুততায় সেই নথি সংশোধিত করে জমা দিতে পারবেন তাঁরা, সেটাই ছিল আশঙ্কার জায়গা। সময় গড়াতেই সেই আশঙ্কাই কার্যত সত্যি হল।
তবে জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর দাবি করছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সাত দিন (শনি-রবি ছুটির দিন সহ) শিবির করে জেলার ২০ হাজার চাষির রেকর্ড বা পরচা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ জটই ওয়ারিশ সংক্রান্ত। আবেদনকারীর সম্পত্তি তাঁর সন্তানদের মধ্যে বিভাজিত হয়েছে। মিউটেশনের কাজের মধ্যে এটাই সবচেয়ে সময়সাপেক্ষ কাজ। তা সত্ত্বেও যথাসাধ্য দ্রুততার সঙ্গে ওই জট মেটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও ভূমি সংস্কার দফতরের দাবির সঙ্গে সহমত হতে পারছেন না কৃষি কর্তারা।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের সুমারি অনুযায়ী বীরভূমে ৩ লক্ষ ১১হাজার ৫৬১টি কৃষক পরিবার রয়েছে। কিন্তু, মাঝের বছরগুলিতে বহু পরিবার ভেঙে, জমি বিভক্ত হয়ে সেই সংখ্যাটি বেড়ে কমপক্ষে সাড়ে চার লক্ষ পরিবার হওয়ার কথা। কিন্তু ২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষে ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৭৪১ জন এবং ’১৯-২০ অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত ১৬ হাজার ৭৬২টি পরিবার ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। জমি সংক্রান্ত সমস্যা মিটলে অনেক বেশি চাষি এই প্রকল্পের আওতায় চলে আসবেন।