Manmohan Singh

‘পাপাজি’র সঙ্গে আর কথা হবে না, বিহ্বল বোন

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াণের খবর পাওয়ার পরে এই শহরে হুইল চেয়ারে বসে কথা হারিয়ে ফেলেছেন গোবিন্দ কৌর। মনমোহনের প্রসঙ্গ এলেই কেঁদে চলেছেন অঝোরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৫:২২
Share:

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ছবিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। —নিজস্ব চিত্র।

নিয়মিত দেখা হওয়ার সুযোগ ছিল না। তবে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলেও রাজনীতিকের পাশাপাশি ব্যক্তি মনমোহন সিংহও ছিলেন নম্র। পরিবারের ছড়িয়ে থাকা লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগও ছিন্ন হয়নি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াণের খবর পাওয়ার পরে এই শহরে হুইল চেয়ারে বসে কথা হারিয়ে ফেলেছেন গোবিন্দ কৌর। মনমোহনের প্রসঙ্গ এলেই কেঁদে চলেছেন অঝোরে।

Advertisement

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের দুই বোন গোবিন্দ ও প্রীতম কৌর সংসার নিয়ে থাকেন কলকাতায়। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন এই শহরে এসে রাজভবনে উঠলে বোনেদের পরিবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। টালিগঞ্জে গোবিন্দের ফ্ল্যাটে এক বার ঘুরেও গিয়েছিলেন মনমোহন। দাদা মনমোহনকে ‘পাপাজি’ বলে ডাকতেন বোনেরা। তাঁর অসুস্থতার সময়ে স্থানীয় গুরুদ্বারে প্রার্থনা করতে যেতেন। তবে দিল্লির এম্‌সে মনমোহনের মৃত্যুর খবর বৃহস্পতিবার রাতে গোবিন্দকে দেওয়া হয়নি। সকালে উঠে ‘পাপাজি’র চলে যাওয়ার খবর শুনে কথাই প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে বৃদ্ধার।

টালিগঞ্জে শুক্রবার মনমোহনের বোনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়। কান্নার দমকে গলা বুজে আসায় কথাই বলতে পারছিলেন না গোবিন্দ। তাঁর পুত্র গুরদীপ সিংহ পরিবারের তরফে কংগ্রেস নেতৃত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। ফোনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার ও প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য তাঁদের জানিয়েছেন, এই শোকের সময়ে তাঁরা পাশে আছেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর শেষকৃত্যে যোগ দিতে এ দিন সন্ধ্যাতেই দিল্লি গিয়েছেন গুরদীপ। তবে শারীরিক অবস্থার কারণেই গোবিন্দের যাওয়া হচ্ছে না।

Advertisement

মনমোহন সিংহের বোনের বাড়িতে কংগ্রেস নেতা। টালিগঞ্জে। —নিজস্ব চিত্র।

আশুতোষের বক্তব্য, ‘‘দেশের শীর্ষ স্থানে পৌঁছেও মনমোহন বিনয়ী ছিলেন। পরিবারের লোকজন বললেন, ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি সময় দিতেন। সুযোগ পেলেই ওঁরা দেখা করতেন।’’ গুরদীপও জানিয়েছেন, মনমোহনের প্রয়াণে সারা দেশের সঙ্গে তাঁরা শোক ভাগ করে নিচ্ছেন। গত বছর দিল্লিতে মনমোহনের সঙ্গে তাঁদের শেষ বার মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়েছিল। অন্য সময়ে কথার মাধ্যম ছিল ভিডিয়ো কল।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে আগামী ৭ দিনের জন্য সব রাজনৈতিক কর্মসূচি বাতিল করেছে কংগ্রেস। মনেমোহনের ছবির সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে ও নীরবতা পালন করে এ দিন প্রদেশ কংগ্রেসের দফতর বিধান ভবনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করেছেন দলের নেতা-কর্মীরা।

প্রদেশ কংগ্রেসের মনমোহন স্মরণ। বিধান ভবনে। —নিজস্ব চিত্র।

কর্নাটকের বেলগাভিতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বর্ধিত বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ায় প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্কর সেখানে ছিলেন না। তবে দলের কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, “আগামী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রদেশ কংগ্রেস সব কর্মসূচি বাতিল করছে। সব দলীয় দফতরে আমাদের পতাকা অর্ধনমিত রেখে প্রিয় নেতাকে স্মরণ করা হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে একাধারে এমন এক জন সৎ রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদ বিরল।’’ বেলগাভি থেকেই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘এই সভায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন, দলের প্রাক্তন সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর আসার কথা ছিল। রাতে খবর পেলাম, মনমোহন আর নেই। এক জন দূরদর্শী নেতা এবং আধুনিক ভারতের অর্থনীতির স্থপতি হিসেবে তাঁর অবদান চিরকাল মনে রাখা হবে।’’ আর বিধান ভবনে এসে প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপও মনে করিয়ে দিয়েছেন, “নোটবন্দির সময়ে রাজ্যসভায় মাত্র পাঁচ মিনিটের বক্তৃতায় মনমোহন বলেছিলেন, এর ফলে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার কমে যাবে। তা-ই হয়েছিল। আজকে যাঁরা সম্মান জানাচ্ছেন, তাঁরাই এক দিন তাঁকে অপমান করেছিলেন! আশা করি, বর্তমান কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মেনে নেবে, তাঁর দেখানো পথই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement