দেওয়ালে বোমাবাজির চিহ্ন। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত
এক টুকরো জমি আর একটি ক্লাবের দখলকে কেন্দ্র করে মুড়ি মুড়কির মতো ফাটল বোমা। দুবরাজপুরের পাকুরিয়া গ্রামে মঙ্গলবার সকালের ওই ঘটনা তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদ বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, এখানে দল বিষয় নয়। জমিকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব। তবে দু’দল তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত তা মানছেন নেতৃত্ব। বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে এ দিনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘দু’পক্ষের মোট আট জনকে আটক করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য দায়ী এমন কিছু ব্যক্তির মোটরবাইক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তাজা বোমা কোথাও রয়েছে কিনা দেখা চলছে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ওই গ্রামে তৃণমূলের একটি কার্যালয় রয়েছে। কারও দাবি সেটা ক্লাব। ব্যক্তিগত জমির উপরে তৈরি ওই ক্লাবের সদস্যরা তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত, তেমনই ক্লাবটিতে যাতায়াতের জন্য যে পথ ব্যবহার করা হয় সেটিও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি বলে দাবি শাসকদলের সঙ্গে জুড়ে থাকা অন্য পক্ষের। সমস্যার সূত্রপাত সেখানেই।
জানা গিয়েছে, জমির স্বত্ত্ব নিজেদের দখলে রাখতে কিছু দিন আগেই ওই পথে বাঁশের বেড়া দিয়েছিল দ্বিতীয় পক্ষ। তাতে ক্ষোভ ছাড়ায় ক্লাব বা দলীয় কার্যালয়ের সদস্য ও গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে। তাঁদের দাবি, শুধু আড্ডা বা দলের কাজে নয় স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের চাল-ডালও সেখানেই রাখা হত। ওই রাস্তা ধরে বিদ্যুতের একটি জাম্পার তুলতেও যেতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। কেন পথ বন্ধ হবে, আপত্তি জোরাল হয়। সূত্রের খবর, সমস্যা মেটাতে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা করে বেড়া তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। বিরোধ তাতে থামেনি। বরং ক্লাব ঘরটিকে তাঁদের নামে রেজিস্ট্রি করে দিতে হবে বলে দু’পক্ষের দাবিতে নতুন বিরোধ দানা বাঁধে। সোমবার দু’পক্ষকে ডেকে বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করেছিলেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি আহম্মদ রেজা খান। সেই বিরোধ যে থামেনি মঙ্গলবার সকালের বোমাবাজি থেকে স্পষ্ট।
অঞ্চল সভাপতি মানছেন, ‘‘দু’পক্ষেই দলের লোক। সোমবার সবাইকে মেটানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু, সকাল থেকে দু’পক্ষ নিজেদের মধ্যে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে। বোমাবাজি শুরু হয়। বাধ্য হয়েই পুলিশ জানাতে হয়েছে।’’ গ্রামে গিয়ে জানা গেল, অন্তত ৫০টি বোমা ফেটেছে। ভয়ে অনেকেই। রাস্তা, বাড়ির দেওয়ালে সর্বত্র বোমার দাগ ছিল। পড়েছিল তাজা বোমাও। এর পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী গ্রামে ঢোকে। ছিলেন ওসি আফরোজ হোসেন, সার্কেল ইন্সপেক্টর আস্তিক মুখোপাধ্যায়রা।
একে কটাক্ষ করছে বিজেপি। জেলা বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি।’’ যা শুনে তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এখানে দল বিষয় নয়। জমিকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব। আমরা পুলিশকে জানিয়েছি, যে বা যাঁরা দোষী তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।’’