বুধবার কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবিঃ স্বরূপ সরকার
অভিযোগ ছিল ‘হুমকি ও শাসানির সংস্কৃতি’ চালানোর। সেই অভিযোগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বহিষ্কার করা হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের পাঁচ ডাক্তারি পড়ুয়াকে। কিন্তু তাতে বরং সংশ্লিষ্ট পাঁচ পড়ুয়া এবং টিএমসিপির পাল্টা চাপ আসতে থাকে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি এমন হয় যে, প্রায় মাঝ রাতে কলেজ কাউন্সিলের বিশেষ বৈঠক ডেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন কর্তৃপক্ষ।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল সূত্রের খবর, রাতভর নাটকের পরেও বিষয়টি শেষ হয়নি। বুধবার দুপুরে কলেজ কাউন্সিলের প্রায় চার ঘণ্টার বৈঠক শেষে স্থির হয়, ওই পাঁচ ছাত্রকে একটি সিমেস্টার তথা ছ’মাসের জন্য ‘সাসপেন্ড’ করা হচ্ছে। এবং তাঁরা এমবিবিএস পড়া চলাকালীন আর হস্টেলে থাকতে পারবেন না। কলেজের নতুন ডিন অনুপমনাথ গুপ্ত এ দিন বিকেলে অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহাকে পাশে বসিয়ে এই ঘোষণা করেন। অধ্যক্ষ এই ‘চাপ’ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেননি। মুখে কুলুপ টিএমসিপির মেডিক্যাল কলেজের শাখার নেতাদেরও। ডিন বলেন, ‘‘ওই পড়ুয়ারা শাস্তির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছিলেন। সেই মতো বহিষ্কারের সিদ্ধান্তটি নিয়ে এ দিন আলোচনা করা হয়। ওই পাঁচ পড়ুয়াকে একটি সিমেস্টার তথা ছ’মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। পুরো এমবিবিএস পড়াকালীন তাঁরা হস্টেলে থাকতে পারবেন না।’’
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ। অধ্যক্ষের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পাঁচ পড়ুয়াকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়। তাঁরা হলেন তৃতীয় প্রফেশন পার্ট-ওয়ানের জয় লাকড়া, ঐশী চক্রবর্তী ও সৃজা কর্মকার এবং তৃতীয় প্রফেশন পার্ট-টু-এর তীর্থঙ্কর রায় এবং অরিত্র রায়। ওই পড়ুয়ারা টিএমসিপি নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেন। ঠিক হয়, সতীর্থ অন্য পড়ুয়াদের নিয়ে তাঁরা অধ্যক্ষের কাছে যাবেন এবং বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানাবেন। সে মতো পৌনে ৮টা নাগাদ অধ্যক্ষের দফতরে তাঁরা স্মারকলিপি দিতে যান। কেন এ ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে বলে অধ্যক্ষের কাছে দরবার করা হতে থাকে। অধ্যক্ষ তাঁদের জানান, বুধবার কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক ডেকে আলোচনা হবে। ওই পড়ুয়ারা রাতেই বৈঠক ডাকার দাবি জানান। শেষ পর্যন্ত রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ কলেজ কাউন্সিলের ‘বিশেষ বৈঠক’ ডাকেন অধ্যক্ষ।
নিরাপত্তার খাতিরে সাদা পোশাকে পুলিশও পৌঁছয় অধ্যক্ষের দফতরের কাছে। ওই রাতেই মোট আট সদস্যকে নিয়ে কলেজ কাউন্সিলের ওই ‘বিশেষ বৈঠক’ হয়। রাত দেড়টা নাগাদ জানানো হয়, পাঁচ পড়ুয়াকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত থাকল। বুধবার কলেজ কাউন্সিলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির বৈঠকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ দিন বৈঠকে তা নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা হয়। বিভাগীয় প্রধানদের একাংশ আগের রাতে ‘চাপের মুখে’ কেন বৈঠক করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বৈঠক-শেষে কলেজ কাউন্সিলের সদস্য তথা হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার নির্মল বেরা বলেন, ‘‘হুমকির সংস্কৃতি এখনও চলছে। গভীর রাতে বৈঠক ডাকা, জোর করে চাপ দিয়ে সিদ্ধান্ত বদল— হুমকি সংস্কৃতিরই পরিচায়ক।’’
অভিযুক্ত তথা শাস্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে তীর্থঙ্কর রায় বলেন, ‘‘আজকের বা আগের কাউন্সিল মিটিংয়ে আমাদের ডাকা হয়নি। আমাদের দিকটা ঠিক মতো শোনা হয়নি। আমি নিজে শাস্তি পেয়েছি। কেন পেয়েছি, জানি না।’’ ‘হুমকি সংস্কৃতি’র বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী পড়ুয়া হিরন্ময় রায় বলেন, ‘‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে কলেজে হুমকির সংস্কৃতি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।’’