২০১৪-র প্রাথমিক টেটের ধর্না মঞ্চে চলছে কালী আরাধনা। সেখানেই কালী সেজেছেন এক চাকরি প্রার্থী। দাবি, দোষীদের শাস্তি এবং নিজেদের চাকরির। সোমবার ধর্মতলায়। ছবি: সুমন বল্লভ।
বিক্ষোভ মঞ্চে চেয়ারে বসে আছেন রাজামশাই। আছেন পাত্র-মিত্ররাও। রাজার বাচনভঙ্গি অবিকল হীরক রাজার মতো। পাত্রমিত্ররাও ছন্দ মিলিয়েই তালে তাল দিচ্ছেন। তবে গল্পটি ‘হীরক রাজার দেশে’-র নয়, বরং নাটকটি প্রাসঙ্গিক। বঙ্গের চাকরি দুর্নীতি! কালীপুজোর দুপুরে এমনই নাট্যাভিনয় দেখা গেল ধর্মতলায় স্কুলে গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি চাকরির আন্দোলনকারীদের মঞ্চে।
আলোর রোশনাইয়ে ভাসছে রাজ্য। তবে দীপাবলির সেই আলোতেও মুখ উদ্ভাসিত হচ্ছে না এ রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীদের। তাঁরা কলকাতার ধর্মতলায় সোমবারও আন্দোলন জারি রেখেছেন। কিন্তু তারই মাঝে নানা দৃশ্য দেখা দিয়েছে আন্দোলনের বিভিন্ন মঞ্চে। কোথাও নাটক হয়েছে, কোথাও বা জনৈক আন্দোলনকারী এঁকেছেন কালীর মুখ।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিসের সামনে থেকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের তাড়িয়ে দিলেও ধর্মতলায় মাতঙ্গিনী মূর্তির পাদদেশে প্রাথমিক টেট আন্দোলনকারীদের ধর্না চলছেই। সেখানে অভিনব নাটক দেখা গিয়েছে। কালী ঠাকুর মর্ত্যে এসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আচমকাই দেবীর পা লাগে রাস্তায় শুয়ে থাকা এক যুবকের গায়ে। দেবী জানতে চান, ওই যুবক কেন এ ভাবে রাস্তায় পড়ে আছেন? যুবকের মুখেই তিনি শোনেন নিয়োগে দুর্নীতি এবং যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চনার কথা। দেবীর হাত থেকেই নিয়োগপত্র পান ওই যুবক।
রাজ্য সরকারের গ্রুপ ডি পদের চাকরিপ্রার্থীরা আন্দোলনের মঞ্চেই কার্যত কালী আরাধনা করেছেন। এক আন্দোলনকারী কালো রঙের আর্ট পেপারের মধ্যে কালী মূর্তি এঁকেছেন। সেই ছবির সামনেই হাতজোড় করে চাকরি চাইতে দেখা গিয়েছে। কিংশুক চৌধুরী নামে এক আন্দোলনকারী বলেন, “গত শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, প্রাথমিক টেট-এর চাকরিপ্রার্থীরা শিক্ষা দফতরের অধীন। কিন্তু আমরা রাজ্য সরকারের গ্রুপ-ডি চাকরিপ্রার্থীরা তো তাঁর দফতরের অধীনে! মুখ্যমন্ত্রী নিজেই গ্রুপ-ডি বোর্ড তৈরি করেছিলেন। তিনি আমাদের নিয়োগের বিষয়টি যেন নিজে হস্তক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং দ্রুত নিয়োগ হয় সেই দাবি জানাচ্ছি।”
দুপুরের পর থেকেই আবহাওয়া খারাপ হয়েছে। তবুও মঞ্চ ছাড়েননি আন্দোলনকারীরা। গান্ধী মূর্তির পাদদেশে এসএসসি-র নবম থেকে দ্বাদশের শিক্ষক পদপ্রার্থীরা প্রদীপ হাতে বসেছিলেন।
দীপাবলির সন্ধ্যাতেও সেই প্রদীপে আলো জ্বলেনি।