মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র
টসিলিজুমাব-কাণ্ডের পর ফের বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী নির্মল মাজি। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে তাঁর জন্মদিন উদ্যাপনের কথা ছিল। হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাঠিয়ে সকলকে আসতেও বলা হয়েছিল মেডিক্যাল কলেজে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বিক্ষোভের জেরে ভেস্তে গেল। নির্মল পৌঁছতেই তাকে ‘গো ব্যাক’ পোস্টার দেখানো হয়। জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভের জেরে গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে যেত হল নির্মলকে।
বুধবার মেডিক্যাল কলেজের ভিতরেই নির্মলের জন্মদিন উদ্যাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি কলেজে পৌঁছতেই তৃণমূলপন্থী জুনিয়র ডাক্তাররা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। হাসপাতালের মধ্যে নির্মলের জন্মদিন পালনের বিরোধিতা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি নিয়ে তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। সঙ্গে ছিলেন ডাক্তারি পড়ুয়ারাও। ফলে মেডিক্যালে এসেও গাড়ি থেকে না নেমে দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে সেখান থেকে চলে যান নির্মল।
মেডিক্যাল কলেজের ইডেন হাসপাতালের একাংশে প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের(পিডিএ) অফিস। সেখানেই সকাল থেকে নির্মলের জন্মদিন পালনের তোড়জোড় চলছিল বলে জানান এক চিকিৎসক। কেক, ফুল, খাবারের বাক্স হাতে বেশ কিছু চিকিৎসাকর্মীকেও ইডেন হাসপাতালের সামনে দেখা যায়। যদিও তাঁদের কেউ জন্মদিনের অনুষ্ঠানের বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। হাতে ফুল নিয়ে আসা এক চিকিৎসককে নির্মলের জন্মদিন পালনের বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি জানান তিনি জন্মদিনের জন্য আসেননি। অন্য এক জনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। আর হাতের ফুলটা তাঁকে দিয়েছেন ডেপুটেশন দিতে আসা কর্মীরা।
তবে এই জন্মদিনের পরিকল্পনা নিয়ে অসন্তুষ্ট তৃণমূলপন্থী চিকিৎসকদেরই একাংশ। তাদের বক্তব্য, কোভিডকালে হাসপাতালে জন্মদিন পালন করার কোনও যৌক্তিকতা নেই। এ ছাড়া হাসপাতালের পিডিএ-সমর্থকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যে ভাবে এই জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছে তা ‘হুইপ’ জারি করার শামিল বলে মনে করছেন অনেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বললেন, ‘‘হোয়াটসঅ্যাপ করে পিডিএ-এর সেন্ট্রাল অফিসে নির্মলদা’র জন্মদিন পালন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। কেউ নিজে থেকে ওই পরিকল্পনায় শামিল হয়েছেন। কেউ আবার ভয়ে যাচ্ছেন।’’ যদিও কিসের ভয় তা সামনাসামনি খোলসা করতে চাননি কেউই। বিক্ষুব্ধ এক চিকিৎসক জানান, নির্মলের জন্মদিন পালনের জন্য অনেক স্বাস্থ্যকর্মী তাঁদের কাজ ফেলে আসতে বাধ্য হয়েছেন। এতে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল।
বুধবার বেলা ২টো নাগাদ নির্মলের জন্মদিন পালন করা হবে বলে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় জানানো হয়েছিল বলে জানান এক জুনিয়র চিকিৎসক। সেই মতো বেলা আড়াইটে নাগাদ হাসপাতালের পিডিএ অফিসের সামনে গাড়ি করে আসতে দেখা যায় নির্মলকে। কিন্তু তাঁকে দেখেই তৃণমূলপন্থী জুনিয়র ডাক্তারদের কয়েক জন বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
কোভিড বিধি মেনেই নির্মলের জন্মদিন পালন করা হবে বলা হলেও, কোভিড পরিস্থিতিতে হাসপাতাল চত্বরে জন্মদিন পালনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন চিকিৎসক সুব্রত শূর। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এর আগেও কোভিড বিধি ভেঙে এবং হাসপাতালের নিয়মের তোয়াক্কা না করে জোরে গান চালিয়ে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করা হয়েছিল। এখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এর মধ্যে জন্মদিন পালনের পরিকল্পনা কোন যুক্তিতে? এতে চিকিৎসক সমাজের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।’’
এর আগে করোনাকালে মেডিক্যাল কলেজ থেকে নিয়ম ভেঙে জীবনদায়ী টসিলিজুমাব ওষুধ নিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল এক চিকিৎসক এবং নার্সের বিরুদ্ধে। সে সময়েও নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অডিয়োবার্তায় বিতর্কে জড়ান নির্মল। খোয়া যাওয়া টসিলিজুমাবের হদিশ পাওয়া যায়নি এখনও। এর মধ্যেই নির্মলের জন্মদিন উদ্যাপনের পরিকল্পনা এবং হাসপাতালেই বিক্ষোভ নতুন করে বিতর্ক তৈরি করল।