গুরুদ্বারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
দু’টি মাত্র পঞ্জাবি বাক্যবন্ধ জানেন। অথচ ভবানীপুরের গুরুদ্বারে ঢুকে পঞ্জাব আর বাংলাকে অনায়াসে মিলিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচন প্রার্থী হিসেবে বুধবার হরিশ মুখার্জি রোডের গুরুদ্বারে এসেছিলেন মমতা। দেখা গেল তাঁকে ঘিরে সেলফি তুলবেন বলে পঞ্জাবি মহিলাদের ভিড় উপচে পড়ছে। বক্তৃতা শেষ করে বেরনোর পথে পুরুষদেরও বলতে শোনা গেল, "দিদি এর পর কিন্তু আপনাকে দিল্লিতে চাই।"
ভোটের আগে জনসংযোগ কর্মসূচি ছিল তৃণমূল নেত্রীর। সেই উপলক্ষে গুরুদ্বারে এসেছিলেন। চাদর চড়ানোর পর বক্তৃতা দিতে উঠে মমতা প্রথমেই জাতীয় সঙ্গীতের উদাহরণ টেনে আনলেন। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাতীয় সঙ্গীত শুরু করেছিলেন পঞ্জাবের নাম দিয়ে। শেষ করেছিলেন বাংলায়।’’ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আবৃত্তিও করেন জাতীয় সঙ্গীতের ওই ছত্রটি—‘‘পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ।’’ আবৃতি শেষ করেই মমতার মন্তব্য, ‘‘স্বাধীনতার লড়াই সম্পূর্ণই হত না, যদি পঞ্জাব না থাকত। স্বাধীনতার যুদ্ধে বিপ্লবীদের মধ্যে বাঙালি আর পঞ্জাবিদের সংখ্যাই বেশি।’’
ভবানীপুরের মোট ভোটারের ৮ থেকে ১০ শতাংশই পঞ্জাবি। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর উপনির্বাচনে এই ভোটও মমতার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও গুরুদ্বারে ভোট নিয়ে একটি কথাও বলেননি মমতা। বরং বললেন, ‘‘আমি পঞ্জাবি ভাষা বেশি বলতে পারব না। তবে গুরুদ্বারের হালুয়া খেতে ভালবাসি। আগেও এখানে এসেছি। গুরদ্বারে এলেই মনটা শান্ত হয়ে যায়।’’ মমতা নির্দ্বিধায় জানিয়ে দেন, ‘‘আমি সাকুল্যে দু’টি পঞ্জাবী কথা জানি। অনেক দিন আগে শিখেছিলাম। এক হল, ‘ওয়াহেগুরুজি কি ফতে ওয়াহেগুরুজি কি খলসা’ আর অন্যটি হল ‘যো বোলে সো নিহাল সৎশ্রী অকাল’।’’ মমতার কথা শেষ হতে না হতেই সঙ্গে গুরুদ্বারে উপস্থিত পঞ্জাবিরাও তাঁর সঙ্গে গলা মেলান।
গুরুদ্বারে পঞ্জাবি মহিলারা ভিড় জমিয়েছিলেন মমতাকে দেখবেন বলে। সেলফি তোলার আবদারও করেন। তাঁদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘আমাদের ঘরেও কিন্তু পঞ্জাবি মেয়ে আছে। অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা পঞ্জাবি। ও রোজ ভোর চারটেয় গুরুদ্বারে আসে। আবার কালীঘাটেও পুজো দেয়। মেয়েকে পঞ্জাবি মন্ত্র শিখিয়েছে। ও বলতেও পারে।’’
হালকা কথাবার্তার মধ্যেই উঠে আসে কৃষক বিক্ষোভ প্রসঙ্গও। মমতা জানিয়ে দেন, ‘‘কৃষকদের প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আমি এর আগেও মোবাইলে বেশ কয়েক বার কৃষক বিক্ষোভে বক্তৃতা দিয়েছি। ওঁরা আমার সঙ্গে দেখাও করেছিলেন। আজ আপনাদেরও বলছি। সহযোগিতার দরকার হলে ফরমাশ করবেন। আমি তা পালন করব।’’