‘আচার্য’ মোদী-মমতায় আপত্তি
রাজ্যের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাখার বিরোধিতা করে বিবৃতি জারি করেছেন শহরের বিশিষ্টদের একটি অংশ। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা কোনও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরই আচার্য পদে কোনও রাজনীতিবিদকে চান না। তা সে রাজ্যেরই হোক বা কেন্দ্রের। তাঁরা চান কোনও শিক্ষাবিদকে। যেমন তাঁরা চান না পদাধিকার বলে দেশের প্রধানমন্ত্রী (অধুনা নরেন্দ্র মোদী) বিশ্বভারতীর আচার্য পদে থাকুন।
শনিবার শহরের বিশিষ্টদের মধ্যে কয়েক জনকে ফোন করে ওই মর্মে একটি বিবৃতিতে তাঁদের নাম দেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। সেই বিবৃতিটি দিয়ে জনমত গঠনের কাজও শুরু হয়েছে। কারা এই বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনও খবর নেই। কেউ বিবৃতিটি পেয়েছেন পুরনো সুহৃদের কাছে, কেউ পেয়েছেন কোনও শিক্ষা সংস্থার থেকে। তবে বিবৃতিটি একই। সেখানে দাবি তোলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে কোনও রাজনৈতিক দলের তকমাধারী থাকবেন না। সেই পদে থাকবেন কোনও প্রকৃত শিক্ষাবিদ। তাতে শিক্ষাক্ষেত্রে পঠন-পাঠনের উপযুক্ত পরিবেশ বজায় থাকবে। কোনও দলগত অভিমত ছাত্রসমাজের ‘কণ্ঠরোধ’ করতে পারবে না। পাঠ্যক্রমও হবে স্বাধীন। এক কথায়, শিক্ষার গণতান্ত্রিক অধিকার বজায় রাখার দাবিই উঠে এসেছে বিবৃতিতে।
নাট্যকার এবং নির্দেশক বিভাস চক্রবর্তী, অভিনেতা কৌশিক সেন, চিত্রশিল্পী সমীর আইচের নাম শোনা গিয়েছে বিবৃতিতে সহমত পোষণকারী হিসেবে। কোন বিষয়ে সহমত তাঁরা, জানতে চেয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন। কৌশিক জানান, আর কে কে সই করেছেন তিনি জানেন না, তবে তাঁর প্রতিবাদের স্বর স্পষ্ট। কৌশিকের মতে, রাজ্যপাল আচার্যের পদ আলো করলে সেটি সরাসরি কেন্দ্রীয় রাজনীতির হস্তক্ষেপ। অমিত শাহ, মোদী যদি ভারতের নতুন ইতিহাস লিখতে চান, তা কখনওই সমর্থনযোগ্য নয়। তাই বলে গেরুয়াকরণের বিকল্প এ-ও নয় যে, সেই আসনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বসে পড়বেন। কারণ, সেক্ষেত্রেও শিক্ষায় রাজনৈতিক দলের রং লেগে যাচ্ছে। কৌশিকের কথায়, ‘‘রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যোগ নেই, এমন শিক্ষাবিদ শহরে বিরল নন। বিজেপি আগ্রাসনের মুখে পশ্চিমবঙ্গ একটা উদাহরণ তৈরি করবে তখনই, যখন মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই পদে না এসে একজন শিক্ষাবিদকে আনবেন।’’ বিভাস, কৌশিক, সমীর— সকলেরই দাবি, আচার্য পদে একজন শিক্ষাবিদকে বসানো হোক। যাঁর গায়ে কোনও রাজনৈতিক দলের রং নেই। এমন মানুষই শিক্ষাব্যবস্থাকে নিরপেক্ষ ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন বলে মনে করছে বিশিষ্টেরা। বিবৃতিতে সেই বাক্যটি লেখা থাকায় নির্দ্বিধায় সই করেছেন তাঁরা বা তাঁদের মতো আরও অনেকেই।
বিবৃতি
প্রসঙ্গত, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপালই রাজ্যের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য। কিন্তু সম্প্রতি সেই পুরনো নিয়ম বদলে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার প্রস্তাব করেছিল রাজ্য মন্ত্রিসভা। গত সোমবার মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়েছে বিষয়টি। পাশাপাশিই, রাজ্যের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে (পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ব্রাত্য বসু) ‘ভিজিটর’ হিসেবে রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। রাজ্য বিধানসভার চলতি অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার যে বিলটি রয়েছে, সেটি পাস করিয়ে, তা আইনে পরিণত করার জন্য রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হবে। তবে নিজেকে আচার্য পদ থেকে সরানোর সেই বিলে রাজ্যপাল সই করেন কি না, তা নিয়েও কৌতূহল তৈরি হয়েছে। যদি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বিলটিতে সই না করেন, তা হলেও রাজ্য সরকার বিধানসভায় অধ্যাদেশ এনে বিলটিকে আইনে পরিণত করতে পারে। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর রাজস্থানের কংগ্রেস-শাসিত সরকারও রাজ্যের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে।