বুধবার আলিপুরের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক অম্বিকেশকে ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। ছবি: ফেসবুক।
এক দশকেরও বেশি সময় পর ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে ফৌজদারি মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র। এই ঘটনাকে তিনি ‘গণতন্ত্রপ্রিয় নাগরিকের জয়’ হিসাবেই দেখছেন। বুধবার আলিপুরের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক তাঁকে ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। তার পরেই আনন্দবাজার অনলাইনকে অম্বিকেশ বলেন, ‘‘গণতন্ত্র রক্ষার জন্য যাঁরা লড়াই করছেন, তাঁদের উৎসাহ দেবে এই জয়।’’ একহাত নিয়েছেন রাজ্য সরকারকেও। তিনি জানিয়েছেন, নাগরিক অধিকার হনন করার জন্যই মামলাটি এত বছর ধরে ফেলে রেখেছিল রাজ্য সরকার।
শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনকে বিশদে মামলার রায় নিয়ে জানিয়েছেন অম্বিকেশ। তাঁর কথায়, ‘‘আলিপুর ক্রিমিনাল কোর্টে যে ব্যঙ্গচিত্র মামলা চলছিল, তাতে রায় হয়নি। রায় না করিয়ে মামলাটিকে ১১ বছর ফেলে রাখছিল পুলিশ, প্রশাসন। ওই আদালতের বিরুদ্ধে আমরা জেলা আদালতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, অম্বিকেশ মহাপাত্রকে অব্যাহতি দিয়ে বেল বন্ডের টাকা ফেরত দেওয়া হোক। মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য বলা হয়েছে।’’
দীর্ঘ দিন ধরে এই মামলা চলার জন্য রাজ্য সরকারের দিকেই আঙুল তুলেছেন অম্বিকেশ। তিনি বলেন, ‘‘সংবিধানের নাগরিক অধিকার হনন করার জন্য, আক্রমণ করার জন্য, স্তব্ধ করার জন্য পুলিশ ও গুন্ডাবাহিনীকে কাজে লাগিয়ে রাজ্য সরকার এই কাজটা করেছিল। এখনও সেই কাজে তারা সচেষ্ট। সেখানে দাঁড়িয়ে এই জয় সংবিধানের পক্ষে, নাগরিক অধিকারের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে জয়।’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘গণতন্ত্র রক্ষার জন্য যাঁরা লড়াই করছেন, এই জয় তাঁদের উৎসাহ দেবে।’’
কেন এত বছর ধরে চালানো হল মামলাটি, তা-ও জানিয়েছেন অম্বিকেশ। তিনি বলেন, ‘‘এত বছর ধরে মামলা ফেলে রাখার কারণ, একটা বার্তা সাধারণ মানুষকে দেওয়া যে, সরকারকে প্রশ্ন করা যাবে না। সমালোচনা করা যাবে না। সেটা যাতে না করে, সে কারণেই গ্রেফতার, পুলিশি হেফাজত।’’
একই সুরে বৃহস্পতিবার সমাজমাধ্যমেও একটি পোস্ট লিখেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ। তিনি লিখেছিলেন, ‘‘প্রায় ১১ বছর পর ব্যঙ্গচিত্রকাণ্ডের ফৌজদারি মামলা থেকে নিষ্কৃতি মিলল। রাজ্যের সাধারণ প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, শাসকদল এবং দুষ্কৃতীদের শত বেআইনি এবং অসাংবিধানিক বাধা সত্ত্বেও। এই জয় গণতন্ত্রপ্রিয় নাগরিকের গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতার জয়।’’
২০১২ সালে সমাজমাধ্যমে একটি মিম শেয়ার করেছিলেন অম্বিকেশ। সে সময় রেলমন্ত্রীর পদ থেকে দীনেশ ত্রিবেদীকে সরিয়ে মুকুল রায়কে বসানো হয়েছিল। সেই নিয়েই সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’ ছবির একটি সংলাপ মিম হিসাবে শেয়ার করেছিলেন অম্বিকেশ। তাতে দেখা গিয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীনেশ প্রসঙ্গে নবনিযুক্ত রেলমন্ত্রী মুকুলকে বলছেন, ‘‘দুষ্টু লোক ভ্যানিশ।’’ ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল অম্বিকেশকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তিনি জামিন পান। চার্জশিট দিয়ে মামলা চালিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ।
মাঝে ১১ বছর কেটে গিয়েছে। দীনেশ এবং মুকুল দু’জনেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। পর মুকুল আবার ফিরে আসেন তৃণমূলে। যদিও সেই ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে মামলা চলছিল আলিপুর আদালতে। ইতিমধ্যে বামঘনিষ্ঠ অম্বিকেশ ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বেহালা পূর্ব থেকে নির্দল প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁর প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করে একটি মানবাধিকার সংগঠন রাজ্যের বিরোধী দল বাম, কংগ্রেস, বিজেপির সমর্থন চেয়েছিল। অম্বিকেশ বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূলের বিরোধী সব দলেরই সমর্থন চেয়েছি আমরা। আমি আমার জন্য লড়ছি না। এই রাজ্যের নাগরিকদের জন্য লড়াই করছি, যাঁদের কেউই এই সরকারের শাসনে নিরাপদ নন।’’
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আলিপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতের কাছে আবেদন করেন অম্বিকেশ। এর পর অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের এজলাসে আবেদনের শুনানি হয়। আদালত সূত্রে খবর, অম্বিকেশের বিরুদ্ধে তেমন সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকায় বুধবার বিচারক তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছেন। ওই নির্দেশ মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের কাছে পাঠানো হয়েছে। তার পরেই অম্বিকেশ সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, তাঁর এই ‘জয়’ আসলে গণতন্ত্রপ্রিয় নাগরিকেরই জয়।