অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র। ফাইল চিত্র।
এগারো বছর পূর্ণ হতে বাকি ছিল মোটে আড়াই মাস। এর মধ্যে বিস্তর জল গড়িয়েছে রাজ্য-রাজনীতিতে। সমাজমাধ্যমে একটি ব্যঙ্গচিত্র ‘শেয়ার’ করার জের তবু বয়ে বেড়াতে হচ্ছিল অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে। বুধবার আলিপুরের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক ওই মামলা থেকে অম্বিকেশের অব্যাহতির নির্দেশ দিলেন। এত দিনে বহু চর্চিত কার্টুন-কাণ্ডের ফৌজদারি মামলা থেকে নিষ্কৃতি পেলেন তিনি।
২০১২ সালে রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীকে সরিয়ে মুকুল রায়কে তাঁর জায়গায় বসানোর পরে সত্যজিতের ফেলুদা-কাহিনি ‘সোনার কেল্লা’র সংলাপ বসানো একটি মিম শেয়ার করেন অম্বিকেশ। এগারো বছরে রাজনীতির স্রোতে দীনেশ, মুকুল শিবির বদলেছেন। মুকুল আবার ফিরেও এসেছেন। রাজনীতিতে তাঁদের গুরুত্বেও বিস্তর রদবদল ঘটেছে। অম্বিকেশ এ দিন ‘সোনার কেল্লা’-র সংলাপের ঢঙেই বলছেন, ‘‘এত দিনে মামলাটা ‘ভ্যানিশ’ হল!’’
ফেসবুকে ব্যঙ্গচিত্র বা মিম শেয়ার করার অভিযোগে ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল অম্বিকেশকে গ্রেফতার করে পূর্ব যাদবপুর থানার পুলিশ। পরে জামিন পান। কিন্তু চার্জশিট দিয়ে মামলা চালিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। ২০২১-এর সেপ্টেম্বরে আলিপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের কাছে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন অম্বিকেশ। এর পরে আলিপুরের অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের এজলাসে আবেদনের শুনানি হয়। আদালত সূত্রে খবর, অম্বিকেশের বিরুদ্ধে তেমন সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকায় বুধবার বিচারক তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছেন। ওই নির্দেশ মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অম্বিকেশের আইনজীবী শিশির চক্রবর্তীর ব্যাখ্যা, ‘‘মূলত অম্বিকেশের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কয়েক বছর আগেই ওই ধারা অসাংবিধানিক বলে খারিজ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের এজলাসে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন অম্বিকেশ। বিচারক তাঁর আবেদনের মান্যতা দিয়েছিলেন। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি আইনের পাশাপাশি আরও দু’টি ধারায় মামলা হয়েছিল। তাই মামলা থেকে অম্বিকেশবাবুকে অব্যাহতি দেননি। এর পরে আমরা দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা বিচারকের কাছে আবেদন করি। তিনি ১০ অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের এজলাসে মামলা স্থানান্তরিত করেন। বুধবার শুনানির পরে বিচারক অম্বিকেশকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।’’ তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘যাঁরা অভিযোগ করেছিলেন আর যাঁরা তদন্ত করেছিলেন, এ তাঁদের বিষয়। এই নিয়ে আমি মন্তব্য করব না।’’
অম্বিকেশের কথায়, ‘‘একটি কার্টুন শেয়ার করার জন্য আমি পাড়ায় শাসক দলের কর্মীদের নিগ্রহ, হুমকি, পুলিশি জুলুমের শিকার হয়েছি। লকআপে রাত কাটাতে হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর সচিবালয়, পুলিশ থেকে নিম্ন আদালতকে কাজে লাগিয়ে এত দিন অনর্থক হেনস্থা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এঁদের বিরুদ্ধে আমার জয় মানে গণতন্ত্রপ্রিয় নাগরিকেরই জয়!’’