মাসখানেক আগে বাণিজ্যিক গাড়িতে ভিএলটিডি বসানোর বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে পরিবহণ দফতর। — ফাইল চিত্র।
‘ভেহিকল লোকেশন ট্র্যাকিং ডিভাইস’ (ভিএলটিডি) প্রযুক্তি সংযোজন প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার সেই প্রক্রিয়া শুরু করতে সময় বাড়ানোর আবেদন করলেন বেসরকারি পরিবহণ সংগঠনের মালিকেরা। এই মর্মে পাঁচটি সংস্থা একত্রে একটি চিঠি দিয়েছেন পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে। জয়েন্ট ফোরাম অফ ট্রান্সপোর্ট অপারেটার্সের নামে ওই চিঠিটি দেওয়া হয়েছে মন্ত্রীকে। সেই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন, অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায়, অনলাইন ক্যাব অপারেটার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়, সিটি সার্বাবান বাস সার্ভিসেসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা, নর্থ বেঙ্গল প্যাসেঞ্জার ট্রান্সপোর্ট অপারেটার্সের সাধারণ সম্পাদক প্রণব মানি এবং পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ দত্ত।
মাসখানেক আগে বাণিজ্যিক গাড়িতে ভিএলটিডি বসানোর বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে পরিবহণ দফতর। প্রথমে ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বরের মধ্যেই এই নতুন প্রযুক্তিটি গাড়িতে লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হলেও, সম্প্রতি আরও একটি নির্দেশিকা জারি করে পরিবহণ দফতর। সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যাত্রী এবং পণ্যবাহী গাড়িতে ১ ডিসেম্বর থেকে ‘ভেহিকল লোকেশন ট্র্যাকিং ডিভাইস’ বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে আগের সিদ্ধান্ত বদল করতে হচ্ছে। নতুন জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১ এপ্রিল থেকে ভিএলটিডি ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। ৩১ মার্চের মধ্যে বেসরকারি গাড়ির মালিকদের এই ডিভাইসটি নিজেদের গাড়িতে বসাতে হবে। নতুন এই সিদ্ধান্তটি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে গাড়ির ‘ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট’ (সিএফ) দেওয়া হবে। সঙ্গে যত দিন না গাড়িতে ভিএলটিডি লাগানো হচ্ছে, তত দিন দৈনিক ৫০ টাকা করে জরিমানা করা হবে। এ নিয়ে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন বেসরকারি পরিবহণ মাধ্যমের মালিকরা। এ বার সময়সীমা বাড়ানো নিয়ে মন্ত্রীর দ্বারস্থ হলেন তাঁরা।
পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ বলেন, ‘‘মাত্র তিন মাস সময়ে প্রায় দু’তিন লক্ষ গাড়িতে ভিএলটিডি ডিভাইস লাগানো সম্ভব নয়। তাই আমরা অতিরিক্ত সময় চেয়েছি। পাশাপাশি, সেই খরচ কমাতেও আমরা পরিবহণ মন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি।’’ সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসেসের সাধারণ সম্পাদক টিটু বলেন, ‘‘আমরা সরকারি নির্দেশ না মানার কথা এক বারও বলিনি। কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামো না হলে কী ভাবে অল্প সময়ের মধ্যে এত বড় কর্মকাণ্ড সফল হবে? তা ছাড়া ভিএলটিডি যে সংস্থাগুলি বসাবে, তাঁদের সঙ্গেও আমাদের কথা বলা জরুরি। কারণ এত দিন আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে যাঁরা কথা বলেছেন, তাঁরা মোটর ভেহিকলসের কর্তা। তাই এ বার বিষয়টি জানতে আমাদের সময় দেওয়া হোক।’’
এ প্রসঙ্গে দফতরের তরফে পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘সব কিছুই আলোচনাসাপেক্ষ। বিষয়গুলি আলোচনা করে দেখতে হবে।’’ তবে বেসরকারি পরিবহণ সংগঠনগুলির দাবি, ২০১৭ সালেই তাঁরা বাণিজ্যিক গাড়িতে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম লাগিয়েছেন। তাতেই গাড়ির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। কিন্তু, যে হেতু রাজ্য সরকার ভিএলটিডি লাগাতে নির্দেশ দিয়েছে, তাই সেই নির্দেশ তাঁরা মানবেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের পরিস্থিতি বিবেচনা করে সময়সীমা বাড়ানো হোক। তা ছাড়া ভিএলটিডি পরিষেবার ক্ষেত্রে গাড়ির গতিবিধি জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গে গাড়িতে থাকবে একটি প্যানিক বাটন। যা দিয়ে গাড়িতে কোনও বিপদ হলে তা দ্রুতই জানানো যাবে প্রশাসনকে।