আগামী ৯ জানুয়ারি কলকাতার আলিপুরের পরিবহণ দফতরের মাল্টিলেভেল পার্কিং প্লেসে এই নতুন পরিষেবার উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
এত দিন মোবাইলে ব্যবহার করা হত সিম কার্ড। এ বার সেই সিম কার্ড বসানো হবে পশ্চিমবঙ্গের সব যানবাহনে। ‘ভেহিকল লোকেশন ট্র্যাকিং ডিভাইস’ (ভিএলটিডি) পদ্ধতি চালু করতে সিম কার্ড বসানো হবে গাড়িতে। এ ক্ষেত্রে মোবাইলে জোড়া সিম লাগানোর মতোই গাড়িতেও সিম কার্ড লাগিয়ে গাড়ির গতিবিধি জানার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরিবহণ দফতরের দাবি, নতুন এই পদ্ধতি চালু হয়ে গেলে যাত্রী সুরক্ষার ক্ষেত্রে বড়সড় পদক্ষেপ করা হবে। আর এই নতুন পরিষেবার উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ৯ জানুয়ারি কলকাতার আলিপুরের পরিবহণ দফতরের মাল্টিলেভেল পার্কিং প্লেসে এই নতুন পরিষেবার উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে থাকবেন পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী দিলীপ মণ্ডল ও পরিবহণ সচিব বিনোদ কুমার। পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, নতুন এই পরিষেবা চালু হলে যাত্রী নিরাপত্তা ও যাত্রিবাহী গাড়ির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা প্রশাসনের পক্ষে সুবিধাজনক হবে। ভিএলটিডি পরিষেবা চালু করতে যে জোড়া সিম কার্ডের ব্যবহার করা হবে, তার একটি কাজ করলেই পদ্ধতি চালু করার উদ্দেশ্য সফল হবে। কারণ, একটি মাত্র সিম কার্ড কাজ করলেই গাড়ি গতিবিধি সহজেই প্রশাসনের নখদর্পণে থাকবে। কিন্তু কোনও কারণে একটি সিম কার্ড কাজ না করলে অপরটি সেই কাজ শুরু করে দেবে। সক্রিয় সিম কার্ড দিয়ে গাড়িগুলির অবস্থান জানা যাবে। তবে মোবাইলের সিম কার্ডের সঙ্গে গাড়ির সিমের চরিত্রগত তফাত রয়েছে। ইতিমধ্যে ১২টি বেসরকারি সংস্থাকে এই কাজ করার বরাত দিয়েছে পরিবহণ দফতর। ইতিমধ্যে বেশ কিছু গাড়িতে ভিএলটিডি লাগানোর কাজ সেরেও ফেলেছেন। তবে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই।
মাস খানেক আগে বাণিজ্যিক গাড়িতে ভিএলটিডি লাগানোর বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে পরিবহণ দফতর। প্রথমে চলতি বছরের মধ্যেই এই নতুন প্রযুক্তিটি গাড়িতে লাগানোর নির্দেশ দিলেও, সম্প্রতি আরও একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়। সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়িতে ১ ডিসেম্বর থেকে ‘ভেহিকল লোকেশন ট্র্যাকিং ডিভাইস’ বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে নিজেদের আগের সিদ্ধান্ত বদল করা হচ্ছে। নতুন জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১ এপ্রিল থেকে ভিএলটিডি ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। ৩১ মার্চের মধ্যে বেসরকারি গাড়ির মালিকদের এই ডিভাইসটি নিজেদের গাড়িতে বসাতে হবে।
নতুন এই সিদ্ধান্তটি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে গাড়ির ‘ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট’ (সিএফ) দেওয়া হবে। সঙ্গে যত দিন না গাড়িতে ভিএলটিডি লাগানো হচ্ছে, তত দিন দৈনিক ৫০ টাকা করে জরিমানা করা হবে। এ ক্ষেত্রে ভিএলটিডি বসানোর সময়সীমা ও জরিমানার বিষয়টি নিয়ে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন বেসরকারি পরিবহণের মালিকরা। সিটি সাবার্বন বাস সার্ভিসেসের নেতা টিটু সাহা বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে জেলায় যে সমস্ত গাড়ি চলাচল করে তার মালিকরা বিষয়টি সহজ ভাবে নিতে পারছেন না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রকল্প সূচনা করছেন, তখন আমাদেরও বিষয়টি আলোচনা করে দেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে রাজ্য সরকারকেও বেসরকারি পরিবহণের মালিকদের বিষয়টি ভাবতে হবে, যাতে তাদের কোনও সিদ্ধান্তে আমাদের ক্ষতি না হয়।’’