মঙ্গলবার সন্দেশখালিতে (বাঁ দিকে) অগ্নিমিত্রা পাল এবং শুভেন্দু অধিকারী, আইপিএস অফিসার যশপ্রীত সিংহ, এসএস (আইবি)। —নিজস্ব চিত্র।
সন্দেশখালি যাওয়ার পথে ধামাখালিতে আইপিএস অফিসার যশপ্রীত সিংহ (এসএস-আইবি)-এর উদ্দেশে ‘খলিস্তানি’ মন্তব্য নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। কিন্তু সেই মন্তব্য বিজেপির কে করেছেন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই তা নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়ে গেল। তৃণমূলের তরফে দাবি করা হল, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ওই মন্তব্য করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্য পুলিশের এডিজি সুপ্রতিম সরকার জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। তবে কার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে, তিনি কোনও নাম করেননি। যদিও সন্দেশখালি থেকে কলকাতায় ফিরে পুলিশকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করেন শুভেন্দু। বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রমাণ করতে হবে বিজেপির কোন নেতা খলিস্তানি মন্তব্য করেছেন। না হলে আমি আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’’
প্রথমে সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্তার সঙ্গে বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের বাদানুবাদের ফুটেজ প্রকাশ্যে এসেছিল। তাতে ওই অফিসারকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমি পাগড়ি পরে আছি বলে আমি খলিস্তানি? এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’’ তার পর অগ্নিমিত্রা এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে লেখেন, ‘‘কেউ কাউকে খলিস্তানি বলেনি।’’ বস্তুত এই ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি ভিডিয়ো এক্সে পোস্ট করেছিলেন। সেটি রিপোস্ট করে অগ্নিমিত্রা লিখেছিলেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে ভিডিয়ো প্রকাশ করুক তৃণমূল। পুলিশ তৃণমূলের ছদ্মবেশে সন্দেশখালিতে কাজ করছে।’’
অগ্নিমিত্রার পোস্টটিকে রিপোস্ট করে পাল্টা একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনেছে তৃণমূল। শাসকদলের আইটি সেলের অন্যতম নেত্রী অদিতি গায়েন একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ফুটেজ পোস্ট করেছেন। সেখানে পুরুষ কণ্ঠে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘এটা হচ্ছে খলিস্তানি।’’ সেই ফুটেজে শুভেন্দুকেও দেখা যাচ্ছে। তৃণমূলের দাবি, ওই পুরুষ কণ্ঠটি শুভেন্দুরই। আনন্দবাজার অনলাইন যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর নেতৃত্বে মঙ্গলবার সন্দেশখালি গিয়েছিলেন বিজেপির কয়েক জন বিধায়ক। ধামাখালি এলাকায় ব্যারিকেড গড়ে শুভেন্দুদের আটকে দেয় পুলিশ। সেই সময়েই পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয় বিজেপি বিধায়ক এবং কর্মী-সমর্থকদের। অভিযোগ, সেই সময়েই ওই জায়গায় কর্তব্যরত পাগড়িধারী আইপিএস অফিসার যশপ্রীতের উদ্দেশে ‘খলিস্তানি’ মন্তব্য উড়ে আসে বিজেপি নেতৃত্বের তরফে। তা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করতেও দেখা যায় যশপ্রীতকে। সেই ভিডিয়োরও সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
তবে বিতর্ক যখন দানা বাঁধতে থাকে তখন শুভেন্দু বলেন, ‘‘পাকিস্তানি-খলিস্তানি এ সব বলার দরকার নেই আমাদের। ওই অফিসার রূঢ় ব্যবহার করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিজের নম্বর বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। আমি বা আমাদের সঙ্গীরা কোনও ধর্মকে আক্রমণ করে কিছু বলিনি। বলবও না। আমরা গুরু নানকজিকে প্রণাম করি। শিখ ধর্মকে সম্মান করি। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে শিখদের।’’
ইতিমধ্যেই রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছেন, এ নিয়ে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু আঙুল উঁচিয়ে যশপ্রীত সিংহকে খলিস্তানি বলে মন্তব্য করেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই মন্তব্য অসংবেদনশীল, প্ররোচনামূলক এবং ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করেছে। এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা করছি।’’ পাশাপাশি, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের ক্ষেত্রে কী আইনি বিধান রয়েছে, তা-ও উল্লেখ করেন তিনি। সুপ্রতিম বলেন, ‘‘ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৫(এ) ধারায় আইনত পদক্ষেপ করা হবে।’’ যদিও সুপ্রতিম কোনও নেতানেত্রীর নাম করেননি।