বাঁ দিক থেকে, সুকান্ত মজুমদার, অধীর চৌধুরী এবং সুজন চক্রবর্তী। — ফাইল চিত্র।
রেশন দুর্নীতি মামলায় কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে গ্রেফতার করার পরেই সরব হলেন বিরোধীরা। রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের ইঙ্গিত, এ বার তৃণমূলের ‘মাথা’রা তদন্তকারী সংস্থার নিশানা হতে পারেন। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, রেশনকাণ্ডে প্রতি সপ্তাহে অন্তত আড়াই কোটি মানুষের রেশনের টাকা লুট করেছেন জ্যোতিপ্রিয়-সহ রাজ্যের শাসকদলের নেতারা! অন্য দিকে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরীর দাবি, টাকার অঙ্কে রেশন দুর্নীতির তুলনায় শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি ‘ছোট শিশু মতো’!
সুকান্ত শুক্রবার বলেন, ‘‘জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতার তো সময়ের অপেক্ষা ছিল। যে পরিমাণ সম্পত্তি বাকিবুরের পাওয়া গেছে সেই সম্পত্তির উৎস কী? যে পরিমাণ সম্পত্তি পাওয়া গিয়েছে সেটা তো সম্পত্তি নয়, বরং রাজত্ব বলা ভালো। সেই সম্পত্তি বা রাজত্ব আসলে কার? কার সম্পত্তি বাকিবুরের নামে আছে? এর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আমরা এর আগেও জ্যোতিপ্রিয়ের বিরুদ্ধে চাল চুরির অভিযোগ পেয়েছি।’’
এর পরেই কোনও নাম না করে সুকান্তের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘বোঝাই যাচ্ছে যত চোর হচ্ছে তত চোরের রানির ছটফটানি বাড়ছে। এখন কান এসেছে পরে মাথাও আসবে।’’ বৃহস্পতিবার বিকেলে জ্যোতিপ্রিয়ের ঠিকানায় ইডি তল্লাশি চলাকালীন সাংবাদিক বৈঠক করে কেন্দ্রীয় শাসকদল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি নেতাদের একাংশ বলছেন, সে দিকেই নিশানা করেছেন সুকান্ত।
শান্তিনিকেতনে জ্যোতিপ্রিয়ের ছ’কোটির বাড়ি প্রসঙ্গে সুকান্ত বলেন, ‘‘আমরা বুঝতে পারি না এঁরা কী ধরনের চাকরি বা ব্যবসা করেন যে, এত কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক এত দ্রুত হয়ে যান। ছ’কোটি টাকার বাংলো তিনি কিনেছিলেন। আর এঁরাই গরিব মানুষের ১০০ দিনের কাজের কথা টাকার কথা বলেন। আমার তো মনে হয় এঁদের যা টাকা জমানো আছে সেই টাকা দিয়েই গরিব মানুষের সমস্ত টাকা মিটিয়ে দেওয়ার যেতে পারে। ১০০ দিনের প্রকল্পের যত টাকা সব এঁদের একাউন্টে ঢুকেছে বলে আমার অনুমান। এঁরাই চুরি করেছেন ১০০ দিনের টাকা।’’
অন্য দিকে, জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে সুজনের দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জানতেন জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতার হবে। কারণ, দিল্লির সব তিনি খবর পান।’’ অতীতে কলকাতা পুলিশের কমিশনার রাজীব কুমারের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী রাস্তায় ধর্না দিলেও জ্যোতিপ্রিয়ের জন্য কেন সিজিও কমপ্লেক্স ঘেরাও করলেন না, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। সেই সঙ্গে সুজনের দাবি, রাজ্য সরকার ১০ কোটি মানুষকে রেশন দেওয়ার দাবি করলেও, সে হিসাবে বিপুল গরমিল রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমি বিধায়ক থাকাকালীন একাধিক বার বিধানসভায় বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম। রাজ্যে জনসংখ্যা সাড়ে ন’কোটি। অন্তত ২০ শতাংশ মানুষ রেশন তোলেন না। খুব বেশি হলে সাড়ে সাত কোটি মানুষ নেন। তা হলে আড়াই কোটি যাচ্ছে কোথায়?’’ গ্রেফতারির পর জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।’’ সেই প্রশ্ন তুলে সুজনের প্রশ্ন, ‘‘তবে কি যিনি ওঁকে মন্ত্রী করেছিলেন, তিনিই ষড়যন্ত্র করেছিলেন?’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘শিক্ষার দুর্নীতির চেয়ে রেশন দুর্নীতি অনেক অনেক বড় মাপের। সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে পরিকল্পিত লুঠ হয়েছে। সাধারণ মানুষের পেটের ভাত কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতে শিশুদের বরাদ্দ খাবার চুরি করে বাজারে বিক্রি করা হয়েছে। ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এফসিআই)-এর বরাদ্দ ভাল চাল বাজারে বিক্রি করে খারাপ চাল মানুষকে দেওয়া হয়েছে। তবে যে মন্ত্রী গ্রেফতার হয়েছেন, তিনি জড়িত না কি অন্য কেউ, তা বলার ক্ষমতা আমার নেই।’’ অধীরের দাবি, এ রাজ্যে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে রেশনে। তাঁর মতে, টাকার অঙ্কে রেশন দুর্নীতির তুলনায় শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি ‘ছোট শিশু মতো’!