—ফাইল চিত্র।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ একাধিক ব্যক্তিত্বের পদ্ম-খেতাব প্রথ্যাখ্যান ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক আরও তীব্র হল। বুদ্ধবাবুর সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বামেদের নিশানা করল বিজেপি। তাদের অভিযোগ, কমিউনিস্টরা চির কালই দেশের পরম্পরা ও সংস্কৃতিকে অপমান করে। বিজেপিকে জবাব ফিরিয়ে দিয়েছে সিপিএমও।
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বুধবার মন্তব্য করেছেন, ‘‘এখানে সব কিছু নিয়েই রাজনীতি হয়। পদ্মভূষণ দেওয়া নিয়েও রাজনীতি হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ যেন দেশের বাইরে! সাধারণ দেশপ্রেমিক বাঙালিকে ধীরে ধীরে দেশের সব কিছুর বিরোধী করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। কমিউনিস্টরা চির কাল দেশের পরম্পরা ও সংস্কৃতিকে অপমান করে।’’ বুদ্ধবাবুর পাশাপাশি সঙ্গীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় যে ভাবে পদ্ম-খেতাব নিতে অস্বীকার করেছেন, সেই প্রসঙ্গে এ দিন মেদিনীপুরে দিলীপবাবু আরও বলেছেন, ‘‘বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য হোন বা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, ওঁরা দেসে আইকন। দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে। এত দিন তো কেউ করেননি। মোদীজি করেছেন। অন্য দলের নেতাদের সম্মান এর আগে কে দিয়েছেন? এটাই অনেকে মানতে পারছেন না!’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এর পাল্টা বলেছেন, ‘‘সংস্কৃতি-পরম্পরার জ্ঞান দিলীপ ঘোষের কাছ থেকে নিতে হবে? শিশির কুমার ভাদুড়ী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, তারাপদ চক্রবর্তী, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, নিখিল চক্রবর্তী, বাদল সরকার, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়েরা পরম্পরা জানেন না, দিলীপবাবুরা সব জানেন! এ সব কথার কোনও মূল্য নেই।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশের তল্পিবাহক ছিল যারা, তাদের কাছে দেশপ্রেমের শিক্ষা নেওয়ার কিছু নেই! কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা ওঁদের স্বভাব, সেটাই করছেন।’’
তবে এরই মধ্যে বুদ্ধবাবুর প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা ঘিরে অস্বস্তির কাঁটাও বিঁধছে সিপিএমকে। কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে মঙ্গলবার দিনের বেলা ফোন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পদ্মভূষণ প্রস্তাবের কথা জানিয়েছিল। তাঁর পরিবারের তরফে তখন ‘ধন্যবাদ’ ছাড়া কিছু বলা হয়নি। আর কোনও বার্তা বুদ্ধবাবুর পরিবারের তরফে না যাওয়ায় বিজ্ঞপ্তিতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নাম রাখা হয়। এই তথ্যকে হাতিয়ার করে বিজেপি খোঁচা দিয়েছে, সিপিএম পরবর্তী ভাবনায় কেন্দ্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। বিতর্কে জল ঢালতে চেয়ে সুজনবাবু যদিও এ দিন বলেছেন, ‘‘বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নিজেই বলছেন, তিনি এই বিষয়ে আগে কিছু জানতেন না। তাঁকে কেউ কিছু জানায়নি। যে কোনও সূত্রের চেয়ে বাংলায় অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য বুদ্ধবাবু কী বলছেন।’’ কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা যে রাষ্ট্রীয় খেতাবের জন্য কাজ করেন না, জ্যোতিবাবুর উদাহরণ দিয়ে ফের তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন সুজনবাবু।
সিপিএমের অন্দরে অনেকেই এই সূত্রে জ্যোতিবাবুর ঘটনার স্মৃতিচারণ করছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবাবুর বাড়ির ফোন সচরাচর তিনি বা তাঁর ছায়াসঙ্গী ধরতেন। তেমন কিছু ঘটলে দ্রুত তা দলের গোচরে আসত। মনমোহন সিংহের সরকার তাঁকে ‘ভারতরত্ন’ খেতাবের প্রস্তাব দেওয়া মাত্র জ্যোতিবাবু বলেছিলেন, ‘রত্ন’ নিয়ে আমার কী হবে! সঙ্গে সঙ্গে দলকে তা জানানো হয়েছিল। রাজ্য সম্মেলন উপলক্ষে সেই সময়ে কলকাতায় প্রকাশ কারাট, সীতারাম ইয়েচুরিরা জ্যোতিবাবুর সঙ্গে দেখা করে এসে বিবৃতিও দিয়েছিলেন। কেন্দ্র আর সিপিএমের বয়ানে তখন কোনও ফাঁক নজরে আসেনি। যা বুদ্ধবাবুর ক্ষেত্রে এড়ানো যায়নি।
কেন্দ্রের মোদী সরকারের তরফে বিগত বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবুকে পদ্মভূষণ দেওয়ার সিদ্ধান্তে ‘বাম-রাম আঁতাঁত’ প্র্সঙ্গও তুলছেন কেউ কেউ। সেই প্রেক্ষিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সরকারি পুরস্কার কে নেবেন আর কে প্রত্যাখ্যান করবেন, তা সম্পূর্ণ ব্যক্তির বিষয়। তবে বামেদের সঙ্গে বিজেপির বহু যুগের আদর্শগত লড়াই। যারা এই কথা বলছে, তাদের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক কী, নিজেরা এক বার খতিয়ে দেখুক! আমি কংগ্রেস করলেও এ কথা মানি না যে, বামেদের সঙ্গে বিজেপির আঁতাঁত রয়েছে।’’