ফাইল চিত্র।
পুজোয় নিয়ন্ত্রণ বিধি অমান্য করলে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। উচ্চ আদালতের সেই রায় নিয়ে কোনও রকম বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা হলে তারা আইনি ব্যবস্থার পথে হাঁটবে বলে শুক্রবার রাজ্য ও কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কোনও পুজো কমিটি বা সংগঠন এ ব্যাপারে বিভ্রান্তি তৈরি করলে তাদের সম্পর্কে আদালতেও অভিযোগ করা হবে।
মণ্ডপে এ বারেও যে ‘নো-এন্ট্রি’ অর্থাৎ দর্শকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকছে, এ দিন ফের সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। অঞ্জলি, আরতি, সিঁদুরখেলাতেও নির্ধারিত সংখ্যার থেকে বেশি লোক যাতে না-থাকে, সেটাও নিশ্চিত করা হচ্ছে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার জানান, বড় পুজোর মণ্ডপে পুষ্পাঞ্জলি, আরতি বা সিঁদুরখেলার জন্য একসঙ্গে ৪৫ জনের বেশি থাকতে পারবেন না। ছোট মণ্ডপে ১৫ জনের বেশি লোক ঢুকতে দেওয়া হবে না। ওই সময় কেউ যাতে নো-এন্ট্রি জ়োনে যেতে না-পারে, তা দেখতে হবে পুজো কমিটিকে। ছোট মণ্ডপের ক্ষেত্রে পাঁচ মিটার এবং বড় মণ্ডপের ক্ষেত্রে ১০ মিটার দূর থেকেই সারতে হবে দর্শন।
অতিমারি আবহে গত বছর অজয় দে নামে এক ব্যক্তির জনস্বার্থ মামলায় হাই কোর্ট পুজো মণ্ডপে দর্শক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা-সহ বিভিন্ন নির্দেশ জারি করেছিল। এ বারেও অজয়বাবু হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন এবং তাতে আদালত গত বছরের নিষেধাজ্ঞাই বহাল রেখেছিল। কিন্তু আদালতের নির্দেশের পরে প্রশাসন যে-বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, তাতে কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে অজয়বাবু ফের আদালতের দ্বারস্থ হন। সেই আর্জির প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারের বক্তব্য শোনে বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। তার পরে আদালত নির্দেশ দেয়, মণ্ডপে ঢোকা, অঞ্জলি দেওয়া ও সিঁদুরখেলার ক্ষেত্রে করোনা টিকার দু’টি ডোজ় নেওয়া এবং মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া গত বছরের নির্দেশে কোনও বদল আনেনি কোর্ট। অজয়বাবুর তরফে সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়-সহ আইনজীবীরা আর্জি জানান, সাগরমেলার ই-স্নানের মতো ই-সিঁদুর খেলার ব্যবস্থা হোক। সেই আর্জিও মানেনি আদালত।
হাই কোর্টের রায়ের পরেই কিছু কিছু মহল থেকে রটিয়ে দেওয়া হয় যে, টিকার দু’টি ডোজ় থাকলে এবং মাস্ক পরলে মণ্ডপে ঢুকতে বলেছে হাই কোর্ট। যদিও পুলিশ এবং প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, আদালত এ কথা কখনও বলেনি। গত বছর পুজো কমিটির নির্দিষ্ট কয়েক জনকে মণ্ডপে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল কোর্ট। এ বারেও তাঁদের কথাই বলা হয়েছে। প্রশাসনের একাংশের মতে, উৎসবের সময় গুজব রটিয়ে অস্থিরতা তৈরির উদ্দেশ্যেই এ ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। গুজব কারা ছড়াচ্ছে, সে-দিকে নজর রাখছে প্রশাসন।
কলকাতা পুলিশের পুজো গাইড ম্যাপ প্রকাশের অনুষ্ঠানে পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র বলেন, “পুজোর সময় কোনও রকম বিশৃঙ্খলা যাতে তৈরি না-হয়, সে-দিকে কড়া নজর থাকবে।” লালবাজারের কর্তারা জানিয়েছেন, মণ্ডপে অঞ্জলি, আরতি বা সিঁদুরখেলার সময় কারা ঢুকবেন, তা স্থির করবে সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটি। যাঁরা মণ্ডপে ঢুকবেন, তাঁদের টিকার শংসাপত্র খতিয়ে দেখা হবে।