রিষড়া শহরে প্রায় ৭০০ পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
ভাঙচুর, বোমাবাজি, অগ্নিকাণ্ডের পর নতুন করে অশান্তি হয়নি। তবে প্রায় এক দিন পরেও থমথমে হুগলির রিষড়া। যে ৪ নম্বর রেলগেট এলাকা ঘিরে সোমবার রাতে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি হয়েছিল, সেই এলাকা-সহ গোটা রিষড়ায় নিরাপত্তার কড়াকড়ি। পুলিশের সঙ্গে পথে নেমেছেন র্যাফ এবং ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার্স রাইফেলস (ইএফআর) কর্মীরা। চলছে আরপিএফের রুট মার্চ। চন্দননগর পুলিশের ‘উইনার্স টিম’ বা মহিলাবাহিনীও টহল দিচ্ছে।
চন্দননগর পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার নতুন করে যাতে অশান্তি না ছড়ায় সে জন্য রিষড়া শহরে প্রায় ৭০০ পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে পা রাখতে নিষেধ করে মাইকের মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছে পুলিশ। সোমবার শ্রীরামপুরের মাহেশ এবং রিষড়ায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। তবে সোমবার রাতে রিষড়া স্টেশন এলাকায় অশান্তির পর মঙ্গলবারও তা জারি রাখা হয়েছে। শ্রীরামপুর এবং রিষড়া থানা এলাকায় মঙ্গলবার সকাল থেকেই ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ। নতুন করে অশান্তি না ছড়ালেও ৪ নম্বর রেলগেট এলাকায় মানুষজন কমই চোখে পড়েছে। মোটের উপর মঙ্গলবার সারা দিনই এলাকার প্রায় সব দোকানপাট বন্ধই ছিল।
রিষড়া স্টেশনে রুট মার্চে মঙ্গলবার ছিলেন আরপিএফের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডেন্ট বিবেক বর্মাও। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘আমজনতা বিশেষত ট্রেনযাত্রীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে এই রুট মার্চ করা হচ্ছে। আচমকা এমন ঘটনা হয়ে যায়। ভবিষ্যতে সতর্ক থাকব আমরা। গত কাল (সোমবার) পরিস্থিতি কিছুটা উত্তেজনাপূর্ণ থাকায় সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই ট্রেন পরিষেবা সাময়িক বন্ধ রাখেন রেল কর্তৃপক্ষ। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে তার ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রিষড়া থানায় পৌঁছন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত-সহ রাজ্য পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা। গোটা পরিস্থিতির খতিয়ান নেন তাঁরা। তার আগেই অবশ্য ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রিষড়ায় পৌঁছে ৪ নম্বর রেলগেট এলাকাও পরিদর্শন করেন তিনি। যে এলাকায় রবিবার গন্ডগোল হয়েছিল, সেখানে নতুন করে অশান্তির খবর পাওয়া যায়নি। রিষড়া স্টেশন এলাকায় ভাঙচুর এবং অগ্নিকাণ্ডের জেরে ৪ নম্বর রেলগেটের একাংশ ভেঙে গিয়েছিল। মঙ্গলবার রেলসুরক্ষা বিভাগের তরফে সেটি বদলানো হয়েছে। অন্য দিকে, রিষড়া স্টেশন-সহ ওই রেলগেটের গেটম্যানের সুরক্ষায় আরপিএফ মোতায়েন করা হয়েছে।
চন্দননগর পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার রাতের অশান্তিতে দশ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। অশান্তির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিরিশ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে বিয়াল্লিশ। তাঁদের সকলকেই মঙ্গলবার শ্রীরামপুর আদালতের হাজির করানো হয়।