উদ্ধার হওয়া বোমা। নিজস্ব চিত্র।
কখনও ড্রামের মধ্যে, নদীর পাড়ে, কখনও পরিত্যক্ত শৌচাগারের চেম্বার, কখনও আবার ঝোপ। গত চার দিনে বীরভূম জেলার একাধিক জায়গা থেকে উদ্ধার হয়েছে চারশোরও বেশি তাজা বোমা। গত বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রামপুরহাটে গিয়ে সমস্ত থানাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বেআইনি ভাবে মজুত করা বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করার জন্য। তার পর থেকেই বোমা এবং বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
কিন্তু গত চার দিনে যে পরিমাণ বোমা বীরভূম থেকে উদ্ধার হয়েছে, তা দেখে বিরোধীদের কটাক্ষ, বারুদের স্তূপের উপর বসে আছে গোটা জেলা। এই জেলায় যত বোমা এবং বারুদ মজুত আছে তাতে শুধু বীরভূম কেন, একটা দেশ উড়ে যেতে পারে! যদিও তৃণমূলের পাল্টা সাফাই, মুখ্যমন্ত্রী কড়া। তাই বোমা এবং আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছেন। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরই শুক্রবার জেলার মাড়গ্রামে উদ্ধার হয় ৬০টি তাজা বোমা। শনিবার ওই মাড়গ্রাম থেকেই আরও ১০০টি বোমা উদ্ধার করে পুলিশ।
রবিবার দুবরাজপুর থেকে ৩০টি বোমা উদ্ধার হয়েছে। একই সঙ্গে উদ্ধার হয় তিন কেজি বারুদ। অন্য দিকে, রবিবারই মল্লারপুর থেকে দুই ড্রামভর্তি ৪০টি বোমা উদ্ধার হয়। সোমবার দুবরাজপুর এবং লাভপুর থেকে উদ্ধার হয় ১৪০টি বোমা। দুবরাজপুর ব্লকের সাহাপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশে একটি পরিত্যক্ত শৌচাগারের চেম্বার থেকে ৩০টি বোমা উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অন্য দিকে, দু’দিন ধরে টানা তল্লাশি চালিয়ে বোমার হদিশ না পেলেও তৃতীয় দিনে লাভপুরের সাও গ্রামে নদীর পাড়ের একটি ঝোপ থেকে দুই ড্রাম তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১১০টি তাজা বোমা ছিল ওই দুই ড্রামে। তবে কে বা কারা কোন উদ্দেশ্যে ওই বোমা মজুত করেছিল তার তদন্ত করছে লাভপুর থানার পুলিশ।
জেলা থেকে এই বিপুল পরিমাণ বোমা উদ্ধারের ঘটনা প্রসঙ্গে বীরভূম কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সভাপতি চঞ্চল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যা বোমা উদ্ধার হয়েছে, তা কিছুই নয়। এর থেকে বহু গুণ বেশি বোমা মজুত রয়েছে বীরভূমে। এই জেলা পুরো বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে আছে। বগটুই কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বীরভূমে যা বোমা আছে, তা শুধু এই জেলাই নয়, গোটা একটা দেশ উড়ে যেতে পারে।” তাঁর অভিযোগ, এর আগে বহু বার বোমা এবং আগ্নেয়াস্ত্র মজুতের বিষয়ে পুলিশকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা কিছুই করেনি। পুলিশ সব জেনেও চুপ করে বসে আছে।
অন্য দিকে, বীরভূম জেলা বিজেপি-র সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, “বীরভূম জেলা বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে। প্রত্যের পাড়ায় পাড়ায়, বাড়ি বাড়ি বোমা পাওয়া যাচ্ছে। যাঁদের বাড়িতে পাওয়া যাচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে তার কোনও উত্তর নেই। কারণ কেঁচো খুড়তে কেউটে উঠে আসবে। মুখ্যমন্ত্রী এটা আইওয়াশ করার জন্য বলেছেন। এর মধ্যে নতুন কিছু দেখতে পাচ্ছি না।”