তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে সিসিটিভি বসাল পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান শেখের বাড়িতে সিসিটিভি লাগাল পুলিশ। মঙ্গলবার বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের নির্দেশ ছিল তৃণমূল নেতার বাড়িতে কাদের আনাগোনা আছে, কারা আসছেন এবং যাচ্ছেন, সবার গতিবিধি নজর রাখার জন্য সিসি ক্যামেরা ‘ইনস্টল’ করতে হবে। সেই নির্দেশমাফিক মঙ্গলবার রাতেই ‘পলাতক’ শাহজাহানের বাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে দিয়েছে পুলিশ। সূত্রের খবর, মোট তিনটি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। তা ছাড়া, সরবেড়িয়ার বাজারেও সিসি ক্যামেরা বসেছে। সব মিলিয়ে মোট ১০টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে বলে খবর।
গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে হানা দেয় ইডির পাঁচ সদস্যের একটি দল। তদন্তকারী সংস্থার সূত্রে খবর, রেশন দু্র্নীতিকাণ্ডের সূত্র ধরে শাহজাহানের বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন ইডি আধিকারিকেরা। ‘গ্রামবাসীদের’ হাতে বেধড়ক মার খাওয়ার অভিযোগ ওঠে। তিন জন আধিকারিককে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। এক জন গুরুতর চোট পান। ওই দিন বাড়িতে গিয়ে যদিও শাহজাহানের দেখা মেলেনি। ইডির দাবি, শাহজাহানের বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছিলেন ৮০০ থেকে ১০০০ লোক। অন্য দিকে শাহজাহানের এখনও খোঁজ মেলেনি। এই ঘটনায় সন্দেশখালির ন্যাজাট থানায় পর পর তিনটি এফআইআর দায়ের হয়। ইডি একটি এফআইআর দায়ের করে। একটি এফআইআর করা হয় পুলিশের তরফে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে। এ ছাড়া, ইডি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে মহিলা এবং শিশুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ তুলে একটি এফআইআর দায়ের হয় একই থানায়।
মঙ্গলবার আদালতে ইডি আশঙ্কা করে যে, মামলার তথ্যবিকৃতি করতে পারে পুলিশ। তারা সিবিআই কিংবা কোনও ‘নিরপেক্ষ সংস্থা’ দিয়ে ঘটনার তদন্ত করার আবেদন জানায়। অন্য দিকে, রাজ্য জানায় পুলিশ তার কর্তব্য পালন করছে। এখনও পর্যন্ত বেশ কয়েক জন গ্রেফতার হয়েছেন। পাশাপাশি মঙ্গলবার রাজ্য আদালতে জানিয়েছে, গত ৫ জানুয়ারি রাত ১২টা ৫৮ মিনিট নাগাদ বাহিনী নিয়ে পুলিশ শাহজাহানের বাড়িতে যায়। বিচারপতি তখন রাজ্যকে প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনারা তখন বাড়ি সিল করেছিলেন? যে তালা দেওয়া ছিল তা ভেঙে বাড়ির ভিতরে ঢুকেছিলেন? পাড়ার কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন? যদি না করে থাকেন, তবে বলতে হবে এটাই তো পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা!’’ রাজ্যের তরফে জবাবে জানানো হয় শাহজাহানের বাড়ি সিল করা হয়নি। তালা ভেঙে বাড়িতেও ঢোকেনি পুলিশ। কিন্তু ওই দিন থেকে বাড়ির সামনে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। নজরদারি করা হচ্ছে। বিচারপতি এর পর প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনারা কি সঠিক ভাবে তদন্ত করতে ইচ্ছুক? আদালত কি আপনাদের সেই সময় দেবে? আদালতের আস্থা রাখতে পারবেন?’’ এর পর সিসি ক্যামেরা বসানোর কথা বলেন বিচারপতি। সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানি রয়েছে বুধবারই।