অবরোধ উঠে যাওয়ার পরে বাসন্তী হাইওয়ে থেকে কাঠের গুঁড়ি সরাচ্ছে পুলিশ। ভাঙড়ের বড়ালি ঘাট এলাকায়। ছবি: সামসুল হুদা
গত বছরের মার্চে বীরভূমের বগটুইয়ে রাতভর সন্ত্রাসে দশ জনের মৃত্যু হয়। তার পরেই রাজ্যের সর্বত্র পুলিশকে বোমা-অস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে প্রশাসনিক নির্দেশিকাও জারি করে রাজ্য পুলিশ। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন ঘিরে মঙ্গল এবং বুধবার ভাঙড়ে তৃণমূল-আইএসএফের সংঘর্ষে যে বিপুল অস্ত্র এবং বোমার ব্যবহার দেখা গিয়েছে, তার পরে প্রশ্ন: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কার্যকর করতে কি আদৌ সক্রিয় ছিল পুলিশ?
মঙ্গলবার কাঁঠালিয়া এবং বিজয়গঞ্জ বাজারে দুই দলের সংঘর্ষে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ে। রাস্তায় পড়ে ছিল অজস্র গুলির খোল ও বোমার সুতলি। পুলিশ সুত্রে খবর, মঙ্গলবার পাঁচশোর বেশি বোমা পড়েছিল।
কোথা থেকে এল এত বোমা? পুলিশের একাংশের দাবি, ভাঙড়-২ ব্লকের চালতাবেড়িয়া, শানপুকুর, ভগবানপুর এবং ভোগালী ১ এবং ২ পঞ্চায়েতের বহু গ্রামে বোমা তৈরি কার্যত কুটির শিল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। তেমনই ভাঙড়-১ ব্লকের প্রাণগঞ্জ, জাউলগাছি পঞ্চায়েতের অনেক গ্রামেও বোমা তৈরি হয়। ভোটের আগে বোমার চাহিদা বাড়ে। হাড়োয়া, মিনাখাঁ, রাজারহাট, বাসন্তী এবং গোসাবা দিয়েও ভাঙড়ে প্রচুর বোমা-অস্ত্র ঢোকে বলে পুলিশেরই একাংশের দাবি। সব দলই সেগুলি ব্যবহার করে।
অতীতে ক্যানিংয়ের জীবনতলা এবং বাসন্তী-গোসাবায় অস্ত্র কারখানার হদিস মিলেছিল। সেখান থেকে অস্ত্র ঢুকত ভাঙড়ে। বিহারের মুঙ্গের থেকে পুরনো পথেও অস্ত্র ঢোকে। মঙ্গলবারের সংঘর্ষে অস্ত্রের ব্যবহার দেখে পুলিশের একাংশ মনে করছে, সব অস্ত্র কারখানার সন্ধান হয়তো এখনও মেলেনি।
পুলিশের দাবি, গত তিন মাসে কাশীপুর, ভাঙড় এবং কেএলসি লেদার কমপ্লেক্স থানা অভিযান চালিয়ে ভাঙড়ের দু’টি ব্লক থেকে দু’শোর বেশি বোমা এবং কয়েকটি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। বারুইপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাকসুদ হাসানের দাবি, ‘‘খবর পেলেই অভিযান চালিয়ে বোমা-অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয়।’’
বিরোধীদের প্রশ্ন, পুলিশ সক্রিয় থাকলে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও কেন ভাঙড়ে মজুত সব বোমা-অস্ত্র উদ্ধার করা গেল না? আদৌ কি ভাঙড়ের অন্দরে ঢুকতে পেরেছিল পুলিশ? সিপিএম রাজ্য কমিটির সদস্য তুষার ঘোষের দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ কার্যকর করতে ব্যর্থ পুলিশ। ভাঙড়ে গত দু’দিনের ঘটনায় তা প্রমাণিত।’’ তৃণমূল বিধায়ক সওকাত মোল্লার অভিযোগ, ‘‘আইএসএফ বাইরে থেকে বোমা-বন্দুক আমদানি করছে। পুলিশ আইএসএফ কর্মীদের বাড়ি থেকে আগে প্রচুর বোমা, বন্দুক উদ্ধার করেছে।’’ আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বোমা, বন্দুক, গুলির রমরমা ততই বাড়ছে। জানি না পুলিশ কী করছে।’’