বেতার তরঙ্গে বার্তা পাঠানোর রেওয়াজ বহু দিনের এবং তা পুলিশের কাজের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতীকী ছবি।
‘‘নাইট লং ‘রেপ’ ওয়াজ় কনডাক্টেড বাই এসপি অ্যান্ড ফিফটি আদার পুলিশ পার্সোনেল’’– ভোরের মুখে বেতারে ভেসে আসা বার্তা কানে আসতেই ধড়ফড় করে বিছানা ছেড়েছিলেন এক পুলিশকর্তা।
ঘুমচোখে কন্ট্রোল রুমে সরাসরি ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন, মানে কী! জানা গিয়েছিল, ইংরেজিতে সড়গড় নন, কন্ট্রোল রুমের এমন পুলিশকর্মী ইংরেজি ‘রেড’-এর জায়গায় রেপ পড়েছিলেন। পরে পুলিশকর্তার মন্তব্য ছিল, ‘‘ভাবতে পারেন, এই বার্তা ছড়িয়ে পড়লে কী কাণ্ড হতে পারত!’’
বেতার তরঙ্গে বার্তা পাঠানোর রেওয়াজ বহু দিনের এবং তা পুলিশের কাজের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই সব বার্তা নিয়ে এই ধরনের বহু গল্পও প্রচলিত আছে। মোবাইল-পূর্ব যুগে একমাত্র বেতার মাধ্যমেই এক জেলার কন্ট্রোল রুম থেকে থানায় থানায় বার্তা পাঠানো হত। এখন, এই মোবাইলের যুগেও একসঙ্গে জেলার সব থানায় কোনও খবর পাঠাতে বেতার বার্তার কোনও বিকল্প নেই।
সেই বেতার ব্যবস্থাকে কী ভাবে আরও আধুনিক করা যায়, তার সন্ধানে নেমেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। পুরনো অ্যানালগ ছেড়ে ডিজিটাল ওয়্যারলেস-এর পথে হাঁটতে শুরু করছে রাজ্য। তাতে বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া যাবে অনেক দূর পর্যন্ত। এবং সেই বার্তা শোনাও যাবে অনেক পরিষ্কার ভাবে। রাজ্য পুলিশের এডিজি (টেলি-যোগাযোগ) অজয় নন্দ জানান, ডিজিটাল মোবাইল রেডিয়ো বা ডিএমআর নামে নতুন এই ব্যবস্থা পাইলট প্রকল্প হিসেবে বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায় চালু করার পরে তা সফল হয়েছে।
ন’কোটি টাকায় এই ডিএমআর প্রকল্প এ বার চালু হতে চলেছে হাওড়া ও ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটে। অজয়ের কথায়, “প্রধানত ট্র্যাফিক পুলিশ এর সুফল পাবে। আগে বিমানবন্দর থেকে মুখ্যমন্ত্রী রওনা হলে ওয়াকিটকিতে সেই বার্তা পৌঁছত দুই কিলোমিটার পর্যন্ত। এখন বিমানবন্দর থেকে রেডিয়ো বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে চিংড়িঘাটাতেও।”
শুধু ট্র্যাফিক নয়, ডিএমআর প্রযুক্তিতে একসঙ্গে যদি একটি কমিশনারেটের অধীন সব থানাকে বার্তা পাঠানো যায়, তা হলে জেলার কোথাও কোনও বড় অপরাধ ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে সব থানায় সেই বার্তা পৌঁছে যাবে। পুলিশকর্তাদের দাবি, সে-ক্ষেত্রে অপরাধ ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হয়ে যাবে সব থানা। এর আগে যে-থানা এলাকায় অপরাধ ঘটত, সেখান থেকে প্রথমে বার্তা পাঠানো হত কন্ট্রোল রুমে। তার পরে সেখান থেকে সেই খবর পেত অন্যান্য থানা।
এবং সেই সব বার্তা এত বার আদানপ্রদানের ফাঁকে ‘রেড’ কখনও-সখনও ‘রেপ’-ও হয়ে যেত!