Pradhan Mantri Awas Yojana

আবাস পেতে টাকার অভিযোগ

২০০৮ সাল থেকে গড়বাড়ি-২ পঞ্চায়েত তৃণমূলের অধীনে। কয়েক বছর আগে এই পঞ্চায়েত সম্পদ সৃষ্টিতে প্রথম হয়ে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছিল। সেখানে এমন দুর্নীতির অভিযোগে শোরগোল পড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৩৩
Share:

এমন রসিদ ছাপিয়ে পঞ্চায়েত টাকা তুলছে বলে অভিযোগ৷ নিজস্ব চিত্র

আবাস যোজনায় বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না তৃণমূলের। কোথাও গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে উঠেছে প্রকল্পে ছাড়পত্রের জন্য টাকা চাওয়ার অভিযোগ। সেই টাকা নিয়ে নাকি তাঁরা রসিদও দিচ্ছেন। যুক্তি দেখাচ্ছেন, রাস্তা তৈরিতে লাগবে এই অর্থ। আবার কোথাও শোনা যাচ্ছে, তৃণমূল জেলা সভানেত্রী বলছেন, সরকারি প্রকল্প বা সুবিধা পেতে হলে তৃণমূল কংগ্রেস করতে হবে।

Advertisement

আবাস যোজনায় এখন রেজিস্ট্রেশন চলছে। এরই মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর-২ ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত গড়বাড়ি-২ পঞ্চায়েত এলাকার উপভোক্তারা এক হাজার টাকা না দিলে, তাঁদের নথিপত্রে পঞ্চায়েত আধিকারিকেরা স্বাক্ষর করবেন না— এমনই হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বিভীষণপুর গ্রামের সুমিতা বারুই বলেন, ‘‘নথিপত্র নিয়ে পঞ্চায়েত অফিসে গিয়েছিলাম। এক হাজার টাকা চাওয়া হয়। না হলে ওঁরা নথিপত্রে সই করবেন না বলেন। বাধ্য হয়েই টাকা দিয়েছি।’’ আরও অনেকেরই অভিযোগ, পঞ্চায়েতের নামে রসিদ ছাপিয়ে টাকা নেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা, এলাকা উন্নয়নের জন্য এক হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। রসিদে প্রধান ও সচিবের সই রয়েছে।

তৃণমূলের প্রধান অঞ্জনা মণ্ডল টাকা নেওয়ার কথা মানছেনও। তবে তাঁর দাবি, ‘‘এলাকায় মাত্র ৩০ শতাংশ রাস্তা কংক্রিটের। বাকি রাস্তা মেরামতে ওই টাকা কাজে লাগানো হত। কারণ, আমাদের পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিলে টাকা তেমন নেই।’’ কিন্তু, সেই টাকা শুধু আবাস যোজনার উপভোক্তাদের থেকেই নেওয়া হচ্ছে কেন? এ বার জবাব এড়িয়ে যান প্রধান।

Advertisement

২০০৮ সাল থেকে গড়বাড়ি-২ পঞ্চায়েত তৃণমূলের অধীনে। কয়েক বছর আগে এই পঞ্চায়েত সম্পদ সৃষ্টিতে প্রথম হয়ে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছিল। সেখানে এমন দুর্নীতির অভিযোগে শোরগোল পড়েছে। বিডিও জয়দেব মণ্ডল বলছেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পে উপকৃত হন, এমন কারও থেকে পঞ্চায়েতের তহবিলের নামে অর্থ নেওয়া যায় না। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’ ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি তরুণ মাইতির কথায়, ‘‘ঘটনাটি শীর্ষ নেতৃত্বের নজরে রয়েছে।’’ আর বিজেপির কাঁথি সংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক তাপস দোলুইয়ের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের সরকারটাই তো কাটমানির সরকার।’’

জলপাইগুড়িতে আবার বিতর্ক বেধেছে জেলা তৃণমূল সভাপতি মহুয়া গোপের মন্তব্যে। আবাস যোজনার ঘর পেতে গেলে বুথের সবাইকে তৃণমুল করতে হবে— এমনই দাবি শোনা গিয়েছে ‘ভাইরাল’ ভিডিয়ো-ক্লিপে মহুয়ার মুখে (আনন্দবাজার ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি)। গত শুক্রবার বিকেলে পাহাড়পুরের একটি বুথে তৃণমূলে যোগদান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখছিলেন মহুয়া। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘‘মনে রাখতে হবে যে, তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত, তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতি, তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য, সর্বোপরি সরকারটা তৃণমূলের… এই পাহাড়পুরের এই বুথের বাসিন্দা হয়ে যদি সরকারি সুবিধে পেতে হয়, এমনকি ঘরটাও পেতে হয়, তা হলে ঘরটা পাওয়ার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসই করতে হবে। কোনও বিজেপি এসে আপনাদের ঘর দিতে পারবে না।’’

জলপাইগুড়ির বিজেপি সংসদ জয়ন্ত রায়ের দাবি, ‘‘তৃণমূল না করলে, রাজ্য সরকারি সুবিধে দেওয়া হয় না। আমাদের কর্মীদের একশো দিনের কাজেও এত দিন বঞ্চনা করা হয়েছে।’’ তবে ঘটনা জেনে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘‘উনি (মহুয়া) অন্যায় করেছেন। বিবৃতি দিয়ে দুঃখপ্রকাশ করুন। রাজ্য সরকারের সব প্রকল্প সকলের জন্য। এই মন্তব্য দল বা সরকারের মনোভাব নয়।’’ যদিও মহুয়া এ দিন দাবি করেন, ‘‘বিজেপি ফর্ম ছাপিয়ে আবাস যোজনার ঘর দেবে বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আমার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘আমি বলতে চেয়েছি, তৃণমূলই চব্বিশ ঘণ্টা মানুষের পাশে থাকে। তৃণমূলের সদস্য, জনপ্রতিনিধিরাই সাধারণ মানুষকে ঘর দেবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement