প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলার কৃষকদের ‘প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি’ প্রকল্পের ‘না পাওয়া’ টাকাও দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। রবিবার হলদিয়ায় এসে এমনই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুধু তাই নয়, নীলবাড়ি দখল করতে পারলে প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকেই বাংলার কৃষকদের ওই প্রকল্পের আওতায় দ্রুত আনার জন্যও সিদ্ধান্ত হবে বলে ঘোষণা করে গেলেন তিনি।
মোদীর রবিবারের ঘোষণা মনে করিয়ে দিল বঙ্গ রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ দিনের কথা। ২০১১ সালের ২০ মে। প্রায় ১০ বছর আগে ওই দিনেই প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহাকরণে সেই রাতেই বসান মন্ত্রিসভার বৈঠক। সেখানে প্রথম সিদ্ধান্তই ছিল, সিঙ্গুরে টাটার কারখানার জন্য অধিগৃহীত অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এ বার মোদী প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে কিসান সম্মান নিধি নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে মমতার পথেই বাংলাতে গ্রাম-মন জয় করা বিজেপি-র লক্ষ্য। মোদী রবিবার অভিযোগ করেন, বর্তমান রাজ্য সরকারের অনিচ্ছার কারণেই বাংলার কৃষকরা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা পাওয়ার সুযোগ পাননি। অন্য রাজ্যের কৃষকরা সেটা পেয়েছেন। বিজেপি ক্ষমতায় এলে প্রকল্প চালুর পাশাপাশি এত দিন অন্য রাজ্যের কৃষকরা যে পরিমাণ টাকা পেয়েছেন সেটাও দেওয়া হবে। মোদীর কথায়, ‘‘মা গঙ্গার তীরে দাঁড়িয়ে বাংলার কৃষকদের বলছি, এই ভোটের পরে বিজেপি সরকার তৈরি হলে প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে কৃষকদের টাকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বাংলার কৃষকদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, পুরনো টাকাও ভারত সরকার দেবে।’’
প্রসঙ্গত, ‘প্রধানমন্ত্রী কিসান নিধি’ প্রকল্পে কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি বছরে ৬ হাজার টাকা করে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। ২ হাজার টাকা করে তিনটি কিস্তিতে দেওয়া হয় টাকা। দু’বছর আগে ওই প্রকল্প চালু হয়। রাজ্য বিজেপি-র এক নেতার দেওয়া হিসেব অনুযায়ী রাজ্যে পরবর্তী সরকার শপথ নেওয়ার সময় সব মিলিয়ে কৃষকদের ‘না পাওয়া অর্থের’ পরিমাণ দাঁড়াবে ১৬ হাজার টাকা করে।
এই প্রকল্পকে ভোটের প্রচারে বিজেপি যে অস্ত্র করতে চায় তা ইতিমধ্যেই বোঝা গিয়েছে। বারবার সব নেতারাই এই কথা বিভিন্ন সমাবেশে বলছেন। অন্য দিকে, রাজ্যে কৃষক-মন জয়ের জন্য ‘কৃষক সুরক্ষা অভিযান’ থেকে কৃষকদের সঙ্গে ‘সহভোজ’ কর্মসূচি নিয়েছে রাজ্য বিজেপি। শুধু এখনই নয়, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়েও রাজ্যে এই প্রকল্প চালু না হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা। এ ব্যাপারে রাজ্যের পক্ষে যুক্তি ছিল, বাংলায় আগে থেকেই মমতা সরকারের ‘কৃষকবন্ধু’ নামে প্রকল্প রয়েছে। যদিও সম্প্রতি রাজ্য সরকার কেন্দ্রের প্রকল্পটি রাজ্যে চালু হবে বলে জানিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছে।
সেই চিঠি নিয়েও রবিবার আক্রমণ শানিয়েছেন মোদী। বলেন, ‘‘এখন বাংলার কৃষকরা দিদিকে ‘সবক’ শেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন। তখন মমতা দিদি নাম-কে-ওয়াস্তে চিঠি পাঠিয়েছেন।’’ মোদী দাবি করেন, বাংলার ২৫ লাখ কৃষক এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে আবেদন করেছেন। কন্তু রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত মাত্র ৬ হাজার কৃষকের তালিকা বানাতে পেরেছে। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ‘‘তালিকা বানালেও সেই কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ পাঠায়নি। তাই কেন্দ্র চাইলেও টাকা জমা করতে পারছে না।’’
কৃষক আন্দোলন নিয়ে রীতিমতো চাপে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই আন্দোলনকে ইতিমধ্যেই সমর্থন জানিয়েছেন মমতা। সে কথা উল্লেখ না করলেও আক্রমণ শানান মোদী। বলেন, ‘‘মা-মাটি-মানুষের নামে অসংবেদনশীল সরকার চলছে। কারা কৃষকদের জীবন নিয়ে খেলা করছে তা গোটা দেশ দেখছে।’’