Amit Mitra

চাহিদা বৃদ্ধিই অস্ত্র অমিতের

অর্থমন্ত্রীর অসুস্থতার কারণে  শুক্রবার বিধানসভায় বাজেট পেশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:১৩
Share:

অমিত মিত্র

করোনা-কালে বসে যাওয়া অর্থনীতির চাকাকে টেনে তুলতে চাহিদা চাঙ্গা করার দাওয়াইয়েই রাজ্য বাজেট আস্থা রেখেছে বলে দাবি করলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। শনিবার অনলাইন সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর যুক্তি, সবার আগে চাহিদার চাকায় গতি ফেরানোর লক্ষ্যে এ বারের রাজ্য বাজেটে জোর দেওয়া হয়েছে পরিকাঠামোয় বিপুল লগ্নি এবং সামাজিক প্রকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধির উপরে। পাখির চোখ করা হয়েছে কাজের সুযোগ তৈরিকে। বিরোধীরা এই ‘ব্যয়বহুল বাজেটে’ টাকার সংস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, খরচ সামলানোর ক্ষমতা আগাম হিসেব কষে তবেই প্রতিটি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়েছে বাজেটে। অর্থাৎ, যাবতীয় প্রকল্প-প্রতিশ্রুতির আর্থিক দায় নিতে রাজ্য তৈরি বলেই তাঁর দাবি।

Advertisement

অর্থমন্ত্রীর অসুস্থতার কারণে শুক্রবার বিধানসভায় বাজেট পেশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গে এ দিন অমিত বলেন, “পরিকাঠামো নির্মাণে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি এবং সরাসরি সাধারণ মানুষের হাতে টাকা দেওয়া-এই দুই অস্ত্রে আস্থা রেখে অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর চেষ্টা কেন্দ্র করেনি। তার খেসারত গুনে ৭.৭৩% সঙ্কোচেনের মুখে দেশের জিডিপি। এ রাজ্যে কিন্তু পরিকাঠামোয় জোর, গৃহ নির্মাণ ইত্যাদির মাধ্যমে আমজনতার খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা হয়েছে।”

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেটকে বিঁধে অমিত আগেই বলেছিলেন, অতিমারির এই সময়ে মোদী সরকারের উচিত ছিল অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইনসের তত্ত্বকে আঁকড়ে ধরা। অর্থনীতির হাল ফেরাতে চাহিদা চাঙ্গা করার জন্য পরিকাঠামোর মতো ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির কথা বলা হয় যেখানে। অভিযোগ, সময় থাকতে সেই পরামর্শে কান দেয়নি কেন্দ্র। তাঁর দাবি, ‘সীমিত সামর্থ্য’ এবং করের ভাগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘কেন্দ্রের বঞ্চনা’ থাকলেও, রাজ্য বাজেটে সেই চেষ্টায় কোনও খামতি রাখা হয়নি। বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে জোর দেওয়ার কারণে রয়েছে তার মানবিক মুখও।

Advertisement

অর্থমন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়েছেন, বাজেট নথি অনুযায়ী, তফসিলি জাতি-উপজাতিভুক্ত মানুষের জন্য ২০ লক্ষ বাড়ি হবে। সেই সঙ্গে সেতু, উড়ালপুল, রাস্তা তৈরি হলে, চাহিদা বাড়বে সিমেন্ট, লোহার। কাজের সুযোগ পাবেন অনেকে। এর দরুন মানুষের হাতে টাকা গেলে, বাড়বে চাহিদাও। তিনি বলেন, প্রায় ৯০ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা তৈরি হওয়ায়, পরিকাঠামোর উন্নতি এমনিতেই হয়েছে। এর পরে রাজ্য সড়কের সঙ্গে গ্রামীণ রাস্তাগুলি যুক্ত হলে, ওই সব এলাকায় দোকান-বাজার তৈরি হবে। বাড়বে আর্থিক কর্মকাণ্ড। অমিত বলেন, সংবাদমাধ্যমে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, এত প্রকল্পের টাকা আসবে কোথা থেকে? উত্তরে তাঁর দাবি, অর্থ দফতরের হাতে ১২ হাজার কোটি টাকা রয়েছে। ২০১০ থেকে বেড়েছে রাজ্যের রাজস্ব আদায়। মুখ্যমন্ত্রী পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের কাছে যে দাবি তুলে ধরেছিলেন, তার দৌলতে রাজস্ব ঘাটতি অনুদান বাবদ চার বছরে ৪০,১১৫ কোটি রাজ্যকে দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন। সেই খাতে আগামী চার বছরে প্রাপ্য যথাক্রমে ১৭৬০৭, ১৩৫২৭, ৮৩৫৩ এবং ৫৬৮ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রীর কথায়, “ওই গ্রান্টের টাকা যে কোনও খাতে খরচ করা যায়। দেশে সব থেকে বেশি অনুদান পাবে এ রাজ্য।… কর সংগ্রহও বিপুল ভাবে বাড়বে। সব মিলিয়ে, বাজেটে যা বরাদ্দ, রাজ্য তা খরচ করতে সক্ষম।”

কেন্দ্র যে কর রাজ্য থেকে সংগ্রহ করে, কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, তার ৪১% ভাগ হিসেবে পাওয়ার কথা রাজ্যেরই। কিন্তু অমিতের অভিযোগ, তা দিতে গড়িমসি করছে মোদী সরকার। এর আগেও অভিযোগ উঠেছে, আগের অর্থবর্ষের ১১,০০০ কোটি মিলিয়ে এ ক্ষেত্রে মোট বকেয়া ২০,৯৬১ কোটি টাকা। এই প্রসঙ্গে তোপের মুখে পড়ে সেস, সারচার্জও। অভিযোগ, মোদী জমানায় সেস এবং সারচার্জ মোট কর আদায়ের ৮% থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬%। এতে কেন্দ্রের রাজস্ব আদায় বাড়লেও, তার ভাগ পায় না রাজ্য। কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের দাবি, তাজপুর সমুদ্রবন্দর তৈরি হলে প্রচুর কাজের সুযোগ তৈরি হবে। একই কথা প্রযোজ্য ডেউচা-পাঁচামির কয়লা কিংবা অশোক নগরের তেল প্রকল্পের ক্ষেত্রে। অর্থমন্ত্রীর দাবি, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএস ৪৪ হাজার কর্মী নিয়োগ করবে রাজ্যে। নতুন চাকরির সংখ্যা বাড়বে উইপ্রো, ইনফোসিসে। এ ছাড়া, রাজ্যে বিপুল সংখ্যক শূন্য পদ পূরণ করা হবে তিন বছরের মধ্যে। সব মিলিয়ে লক্ষ্য, পাঁচ বছরে ১.৫ কোটি কর্মসংস্থান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement