মধ্যমণি: বিজেপির কর্মসূচিতে স্লোগান দিচ্ছেন প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ । ছবি: দেবরাজ ঘোষ
খোলা ছিল জানলা। আশা ছিল, সে জানলা দিয়ে ভেসে আসবে মনের কথা।
বৃহস্পতিবার প্রযুক্তির মাধ্যমে ঠিক সময়ে খুলল জানলা। ‘ভারত কি মন কি বাত কার্যকর্তা কি সাথ’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বললেন অনেক কিছু। তবু তাতে আশ মিটল কি? অনুষ্ঠানের পর এমনই আলোচনা ঘোরাফেরা করছে বিজেপির অন্দরে।
ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপির কার্যালয়ে এ দিন দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ অনুষ্ঠান শুরু হয়। ত্রিপুরা-সহ দেশের কয়েকটি জায়গা ঘুরে ভার্চুয়ালি অরণ্যশহরে পৌঁছন মোদী। প্রতিটি রাজ্য থেকে মাত্র এক জন বুথস্তরের নেতার প্রশ্ন শুনে জবাব দিচ্ছিলেন তিনি। ঝাড়গ্রামের ক্ষেত্রে প্রশ্নকর্তা হিসাবে বাছা হয়েছিল গৌরবরাজ কুণ্ডুকে। তিনি গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের ১০৫ ও ১০৬ নম্বর ‘বুথ-পালক’। এদিন গৌরব প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, ‘‘২০১৯ সালে দেশে মহাজোটের (মহাগটবন্ধন) কোনও প্রভাব পড়বে কি?’’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা ‘মহামিলাবট’ (মহাভেজাল) জোট। বাস্তবটা হল, কংগ্রেস নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচানোর জন্য ছোট ছোট দলের সাহায্য নিয়ে প্রাণের সন্ধান খুঁজছে। এই মহাভেজালের অংশীদার কারা? যারা এক সময় নিজেদের দিকে তাকাতেন না পর্যন্ত। তাঁরা আজ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলছেন।’’ নাগাড়ে মোদী বলে যান, ‘‘মনে করুন বামপন্থীরা মমতাদিদির সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছিল। আবার মমতাদিদি বামপন্থীদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছিলেন। দেশের জনতাকে মুর্খ ভাববেন না। মানুষ সব মনে রাখেন। ভেজাল জিনিস শরীরের পক্ষে খারাপ। এই ভেজাল জোট দেশকে আইসিউতে পাঠিয়ে দিতে পারে।’’
এদিন গৌরবের প্রশ্ন শুনে হতাশ দলের স্থানীয় কর্মীদের একাংশ। কারণ, এ রাজ্যের মধ্যে একমাত্র ঝাড়গ্রাম জেলা কার্যালয়ের সভাঘরে ছিল মোদীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার ব্যবস্থা। সে ক্ষেত্রে কর্মীদের আশা ছিল, ঝাড়গ্রামের লোকসভাকে পাখির চোখ করে প্রধানমন্ত্রীকে কিছু বলার অথবা পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ থাকবে। কর্মীদের কাছে খবর ছিল, মোদীজি সাধারণ এক-দু’জন সমর্থক গ্রামবাসীর কথাও শুনতে পারেন। কিন্তু এ দিন অনুষ্ঠান শুরুর আগেই স্পষ্ট হয়ে যায় এমন কিছুই হচ্ছে না। তা-ও কিছু কর্মীর আশা ছিল, বুথের নেতা গৌরবরাজ অন্তত ঝাড়গ্রাম সম্পর্কিত কোনও বিষয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইবেন। কিন্তু শেষমেষ গৌরবের প্রশ্ন শুনে কিছু হতাশ হন একাংশ কর্মী। তবে বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, ‘‘রাজ্যের মধ্যে একমাত্র ঝাড়গ্রামে মোদীজির সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের ব্যবস্থা ছিল। এটি রাজ্যের কর্মসূচি। তাই রাজ্যের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রশ্ন করেছিলেন গৌরবরাজ।’’ কর্মীদের অবশ্য বক্তব্য, জঙ্গলমহলের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানানোর দরকার ছিল প্রধানমন্ত্রীকে। সে সুযোগ আর হল কই। সুখময় অবশ্য বলছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঝাড়গ্রামের বিষয়ে ওয়াকিবহাল। চিন্তার কোনও কারণ নেই। আগামী লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহলের মানুষের মনের কথা সবাই জানেন।’’
শাসকদল অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল দত্ত বলেন, ‘‘ওটা বিজেপির দলীয় কর্মসূচি। ওদের দলের কিছু লোক গিয়েছিলেন। সাধারণ মানুষ যাননি। মোদীর কথা জঙ্গলমহলের মানুষ শুনতে আগ্রহী নন। জনগণ মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের সঙ্গে আছেন। এখানকার মানুষ, মোদী নয়, মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনতে আগ্রহী।’’