অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে এক মাত্র তেলঙ্গানাতেই জয়ের মুখ দেখেছে কংগ্রেস। মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতায় ফেরা দূরস্থান, নিজেদের দখলে-থাকা রাজস্থান এবং ছত্তীসগঢ়ও বিজেপির কাছে খুইয়েছে রাহুল গান্ধীর দল। রবিবার বিকেলের পর কংগ্রেসের ‘ভূমিকা’ নিয়ে বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার অন্দরেও কাটাছেঁড়া চলছে। এই আবহে কংগ্রেসের নাম না করে তাদের ‘ভুল সংশোধন’ করে নেওয়ার আহ্বান জানালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি ‘ইন্ডিয়া’-র সমন্বয় কমিটির অন্যতম সদস্যও বটে।
সোমবার পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফল নিয়ে অভিষেককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “পরাজিতেরা ভুল শুধরে নিন। আমাদের হাতে সময় অনেক কম। সময় অপচয় না করে সকলের একসঙ্গে কাজ করা উচিত।” অভিষেকের ওই মন্তব্য একাধিক কারণে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। লোকসভা ভোটের আগে ঘর গোছানোর জন্য বিশেষ সময় পাবে না বিরোধীরা, সে কথা যেমন কংগ্রেসকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি, তেমনই সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলারও পরামর্শ দিয়েছেন। তবে পাঁচ রাজ্যের ভোট-ফলাফলের প্রভাব পশ্চিমবঙ্গে পড়বে না বলে স্পষ্টই দাবি করেছেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’।
অভিষেক জোর দিয়েছেন ‘ভুলের পুনরাবৃত্তি’ রোখার উপরে। নিজের দলের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “২০১৯ সালের (লোকসভা) নির্বাচনে আমাদের কিছু ভুল ছিল। ২০২১ সালে (বিধানসভা নির্বাচন) আমরা তা শুধরে নিয়েছি। সাগরদিঘি উপনির্বাচনেও আমাদের ভুল হয়েছিল। আমরা মানুষের কাছে গিয়ে ভুল শুধরে নিয়েছি।” কংগ্রেসের নির্বাচনী ব্যর্থতার প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিতে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। বলেন, “প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন। যোগ্যদের সুযোগ না দিয়ে প্রচারের আলোয় থাকতে চাইছেন কেউ কেউ। এ ক্ষেত্রে যোগ্যদের সুযোগ করে দেওয়া উচিত।” আলাদা করে রাজস্থানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অভিষেক জানান, ভোট শতাংশের দিক থেকে পরাজিত কংগ্রেস এবং বিজয়ী বিজেপির ব্যবধান খুব কম। ‘অভ্যন্তরীণ ঐক্য’ বজায় থাকলে পরাজয় এড়ানো যেত বলেও দাবি করেন অভিষেক। যা থেকে স্পষ্ট যে, রাজস্থানের কংগ্রেস নেতা সচিন পাইলট এবং বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের মধ্যে সুসম্পর্ক না-থাকা এবং সেই ‘জটিলতা’ কাটাতে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের ব্যর্থতার দিকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন তিনি।
তৃণমূল-সহ বেশ কিছু দল কয়েক দিন ধরেই বিরোধীদের মধ্যে আসন রফার বিষয়টি চূড়ান্ত করার উপরে জোর দিতে চাইছে। কিন্তু এই দলগুলির অনুযোগ, বিষয়টি নিয়ে ‘গড়িমসি’ করছে জোটের অঘোষিত নেতা কংগ্রেস। কংগ্রেস সূত্রে অবশ্য বিলম্বের ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়েছিল, পাঁচ রাজ্যের ফলাফলে কংগ্রেস সাফল্য পেলে দর কষাকষির জায়গায় সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে দল। কিন্তু ভোট-ফলাফলে স্পষ্ট যে, সেই স্বস্তির জায়গা কংগ্রেসের আর নেই। এ ক্ষেত্রে হাতে যে বিশেষ সময় নেই, সে কথা তাই অভিষেক স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। অন্য দিকে, ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, ছোট দলগুলি নিজেদের নাক কেটে কংগ্রেসের যাত্রাভঙ্গ করেছে। কংগ্রেস কেন এই দলগুলি, এমনকি, ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদের সঙ্গে আসন বোঝাপড়ায় যায়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এই আবহে অভিষেকের সকলকে নিয়ে চলার ‘বার্তা’ তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা তো প্রথম থেকেই বলেছি, যে যেখানে শক্তিশালী, সে সেখানে লড়লেই কোনও সমস্যা হবে না।’’
‘ইন্ডিয়া’র পরবর্তী বৈঠকে জোটের শরিক দলগুলি কংগ্রেসের কাছে এই বিষয়টি তোলে কি না, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। রবিবার ভোটের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ্যে আসার সময়েই জানা যায়, আগামী ৬ ডিসেম্বর, বুধবার বিরোধী জোটের বৈঠক ডেকেছে কংগ্রেস। সেই বৈঠকে অভিষেক যোগ দেবেন কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান যে, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি ঠিক করবেন। প্রসঙ্গত, রবিবার ভোটের ফলপ্রকাশের পর তৃণমূল নেতাদের একাংশ কংগ্রেসকে ‘চড়া সুরে’ আক্রমণ করেছিলেন। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ যেমন বলেছিলেন, ‘‘এটা বিজেপির জয় নয়। কংগ্রেসের ব্যর্থতা।’’ তবে সোমবার অভিষেকের বক্তব্যের সুর অতটা ‘চড়া’ ছিল না। অনেকের মতে, লোকসভার আগে বৃহত্তর জাতীয় রাজনীতির কথা মাথায় রেখেই সরাসরি আক্রমণের পথে না গিয়ে কংগ্রেসকে ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন অভিষেক। কারণ, তিনি জানেন, বাংলায় তৃণমূল কার্যত ‘অপ্রতিরোধ্য’ হলেও সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেসকে যেমন প্রয়োজন, তেমনই বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলকেও দরকার বিজেপি বিরোধী জোট সফল করার জন্য।