Lottery Ticket

রোজগার ১০০ টাকা, ৬০ টাকা দিয়ে লটারির টিকিট কেটে কোটিপতি বীরভূমের আচার বিক্রেতা

খবর পেয়ে আনন্দ নয়, ভয়ে দু’দিন আর বাড়ির বাইরে বেরোননি নূর। কী ভাবে টাকা পাবেন? কী করতে হবে কোনও ধারণাই ছিল না। কোনও উপায় না দেখে, সোমবার থেকে তাই ছেলেকে নিয়ে মুরারই থানাই আশ্রয় নিয়েছেন নূর।

Advertisement

তন্ময় দত্ত 

মুরারই শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:৪৬
Share:

ছেলের সঙ্গে নূরে আলম শেখ (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

গ্রামে গ্রামে চাটনি বেচে দিনে রোজগার গড়ে ১৫০ টাকা। ও দিকে মুদির দোকানে ধার বাড়ছিল। ধার শোধের জন্য চাপ আসছিল। কোনও উপায় না দেখে মুরারই থানার পলশা গ্রামের নূর আলম শেখ ১০ নভেম্বরের রোজগার ১০০ টাকা থেকে ৬০ টাকাই খরচ করেছিলেন লটারির টিকিটে। যদি কিছু জুটে যায় এই আশায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেই টিকিটই জিতল এক কোটি টাকা।

Advertisement

খবর পেয়ে আনন্দ নয়, ভয়ে দু’দিন আর বাড়ির বাইরে বেরোননি নূর। কী ভাবে টাকা পাবেন? কী করতে হবে কোনও ধারণাই ছিল না। কোনও উপায় না দেখে, সোমবার থেকে তাই ছেলেকে নিয়ে মুরারই থানাই আশ্রয় নিয়েছেন নূর। একই ভাবে কয়েক মাস আগে কোটিপতি হয়েছিলেন বোলপুরের এক মাছ বিক্রেতা। তিনিও থানায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।

নূর বলেন, ‘‘গত শুক্রবার চাটনি বেচে বাড়ি ফেরার পথে বাঁশলৈ বাজারে এক লটারির টিকিট বিক্রেতার কাছে থেকে ৬০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনি। বাড়ি ফিরে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। দুপুর একটায় খেলায় ফল বেরোয়। ওই টিকিট বিক্রেতার একটি টিকিট এক কোটি টাকা জিতেছে বলে গ্রামে খবর ছড়িয়ে পড়ে। ঘুম ভেঙে, নম্বর মিলিয়ে দেখি আমিই জিতেছি।’’

Advertisement

প্রতিবেশীরা জানান, বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে নূরের অভাবের সংসার। মাটির বাড়ি। ঝড়, বৃষ্টি হলে অন্য বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়। কারণ, ঘরে জল পড়ে।পলশা পঞ্চায়েতের প্রধান ঝর্না কাপুরি বলেন, ‘‘দুঃস্থ পরিবার। আগের সমীক্ষায় আবাস যোজনায় নাম ছিল না। উনি টাকা পাওয়ায় সকলেই খুশি।’’

নূর জানান, অভাবের জন্য ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারেনি। টোটোর গ্যারেজে কাজ করে। কোনওক্রমে সংসার চলে। তবে মেয়ের পড়া বন্ধ হতে দেননি নূর। সে এখন একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। যদিও মেয়ের বিয়ে নিয়ে নূর সবসময়ে চিন্তায় থাকেন বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। নূর বলেন, “দিনের শেষে আয় হত ১০০-১৫০ টাকা। সেই টাকায় সংসার চালাবো না ওষুধের খরচ দেব? কোনও দিন ভাবিনি লটারি জিতব। পুলিশের কাছে আশ্রয় নিলে সমস্যা হবে না ভেবে থানায় এসেছি।” টাকা পেলে আগে বাড়ি করার ইচ্ছা নূরের। একই সঙ্গে আচার বেচা ছেড়ে অন্য কোনও ব্যবসা করবেন বলেও ঠিক করেছেন নূর। মেয়ের বিয়েতে কোনও সমস্যা হবে না বলে আশা নূরের।

নূর জেতায় খুশি মুরারই এলাকার বৈধ লটারির টিকিট বিক্রেতারাও। এতে অবৈধ লটারির টিকিট বিক্রি কমবে বলে আশা তাঁদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টিকিট বিক্রেতা বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে বৈধ লটারিতে পুরস্কার জুটছিল না। অনেকে অবৈধ লটারির টিকিট কাটছিলেন। প্রথম পুরস্কারের পরে এই তিন দিনে সরকারি টিকিট বিক্রি অনেকটাই বেড়েছে।’’

মঙ্গলবারও মুরারই থানায় রয়েছেন নূর। এখনও টিকিট ভাঙানো হয়নি। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যতক্ষণ না টিকিট সরকারি ভাবে ভাঙানো হচ্ছে, ততক্ষণ পুলিশ প্রশাসন তাঁদের নিরাপত্তার দ্বায়িত্বে থাকবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement