Cyclone Remal

দুর্যোগে ঝুঁকি নিয়েও বাঁধ রক্ষার লড়াই

শুধু সাগরের ওই তল্লাটেই নয়, ঘূর্ণিঝড় ও কটালের দাপটে দক্ষিণ ২৪ পরগনার আরও নানা জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নদীবাঁধ। কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসনের অপেক্ষায় না থেকে গ্রামবাসীরাই ঘরবাড়ি, খেত-খামার রক্ষায় দুর্যোগ মাথায় করে নেমে পড়েন।

Advertisement

সমরেশ মণ্ডল , প্রসেনজিৎ সাহা

সাগর, গোসাবা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৪ ০৭:৫৫
Share:

গোসাবায় নদীবাঁধ সারাইয়ের কাজে হাত লাগিয়েছেন গ্রামবাসীরা। —নিজস্ব চিত্র।

তখন রাত ৮টা হবে। সাগরের চকফুলডুবি মন্দিরতলার বাসিন্দাদের অনেকেরই খাওয়া হয়নি। হঠাৎ গতিবেগ বাড়াল ঘূর্ণিঝড় রেমাল। উত্তাল হল মুড়িগঙ্গা। রবিবার বাসিন্দারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই নদীবাঁধ উপচে জল ঢুকতে শুরু করল গ্রামে। আতঙ্কিত গ্রামবাসী বেরিয়ে দেখলেন, ঘূর্ণিঝড় ও ভরা কটালের জলের তোড়ে বাঁধের মাটি ধুয়ে যাচ্ছে। ছিঁড়ে গিয়েছে বাঁধ রক্ষার বিশেষ চট। কেউ আর দেরি করেননি। দুর্যোগের মধ্যেই নদীবাঁধ রক্ষায় প্রায় ৩৫ জন হাত লাগালেন।

Advertisement

শুধু সাগরের ওই তল্লাটেই নয়, ঘূর্ণিঝড় ও কটালের দাপটে দক্ষিণ ২৪ পরগনার আরও নানা জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নদীবাঁধ। কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসনের অপেক্ষায় না থেকে গ্রামবাসীরাই ঘরবাড়ি, খেত-খামার রক্ষায় দুর্যোগ মাথায় করে নেমে পড়েন।

মন্দিরতলার বাসিন্দারা রাত ৮টা থেকে প্রায় ১০টা পর্যন্ত ঝড়ের মধ্যে ভিজতে ভিজতেই বাঁধ রক্ষার লড়াই চালালেন। যে অংশগুলির চট ছিঁড়ে যাচ্ছিল, সেখানে ফের ছেঁড়া চট দিয়ে বাঁধন দেওয়া হয়। রাত দশটার পর থেকে রেমালের ‘ল্যান্ডফল’ শুরু হয়। তখন আর কেউ বাইরে থাকতে সাহস করেননি। বাঁধ ছেড়ে প্রত্যেকে নিরাপদ জায়গায় চলে যান। সোমবার সকালে ঝড়ের ঝাপটার মধ্যেও ফের চট ,বাঁশ ও বিশেষ তার দিয়ে ওই বাঁধের প্রায় ৪০০ ফুট ভাঙন আটকালেন গ্রামবাসী।

Advertisement

দুর্য়োগে বাঁধ ভাঙলে কী হয়, সে অভিজ্ঞতা গ্রামের প্রত্যেকের আছে। ইয়াসের ‘ক্ষত’ এখনও তাঁদের মনে টাটকা। এ ছাড়া, প্রতি পূর্ণিমা ও অমাবস্যার কটালে বাঁধ উপচে এলাকায় জল ঢোকে। গ্রামবাসী জানান, রবিবার রাতে জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ধসছে দেখে কাছাকাছি থাকা বাসিন্দারা চিৎকার করে সকলকে সতর্ক করতে থাকেন। তারপরেই শুরু হয় ‘লড়াই’।

অসিত মাল নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘দুর্যোগের এক মাস আগে বাঁধ মেরামত হয়েছিল। কিন্তু বেশিদিন টেকেনি। ফের বাঁধ ধসতে শুরু করে। ঝড়ে বাঁধের পরিস্থিতি দেখে, বাধ্য হয়ে আমরা নিজেরাই হাত লাগাই। যে কোনও মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে পুরো এলাকা প্লাবিত হতে পারত। খুব জোর বেঁচে গিয়েছি।’’

সংশ্লিষ্ট মুড়িগঙ্গা ২ পঞ্চায়েতের প্রধান গোবিন্দ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমি নিজেও গ্রামবাসীদের সঙ্গে বাঁধ রক্ষায় নেমে পড়ি। রাতে ও দিনে বৃষ্টিতে ভিজে গ্রামবাসীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন।’’ গ্রামবাসীদের উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন সাগরের বিডিও কানাইয়া কুমার রায়। তিনি বলেন, ‘‘সেচ দফতর সোমবার বিকেল থেকে ওই এলাকায় মেরামতির কাজ শুরু করেছে।’’

গোসাবা ব্লকেরও কুমিরমারি, পেটুয়াখালি, বালি, পাখিরালয়-সহ বেশ কিছু জায়গায় নদীবাঁধে ধস নামে। সেচ দফতরের কর্মী এবং গ্রামবাসীরা মিলিত ভাবে সেই বাঁধ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন। কুমিরমারিতে বাঁধের উপর প্লাস্টিক, মাটি দিয়ে বাঁধ রক্ষা করেছেন সকলে মিলে। নদীতে একবুক জলে নেমে প্লাস্টিক ধরে শুয়ে পড়ে কার্যত বাঁধ রক্ষা করেছেন গ্রামবাসী।

কুমিরমারির বাসিন্দা অঙ্কন মণ্ডল ও সীতানাথ সর্দার বলেন, “ গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে না এগিয়ে এলে বাঁধ রক্ষা করা যেত না। সকলের প্রচেষ্টাতেই কার্যত এ বারের মতো বিপদের হাত রক্ষা পাওয়া গিয়েছে।” পাখিরালয়ের বাসিন্দারাও একই রকম লড়াইয়ের কথা জানিয়েছেন। সেখানকার শুকদেব জানা, সবিতা নাইয়ারা বলেন, “ বারে বারে নদীর বাঁধ ভেঙে আমাদের সব ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে। সেই কারণে সকলেই নিজেদের ভিটেমাটি রক্ষার জন্য নদীতে নেমে বাঁধে প্লাস্টিক দিয়ে দীর্ঘক্ষণ ঝড়জলের মধ্যে লড়াই চালিয়ে বাঁধ রক্ষা করেছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement