প্রয়াস: ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শীতের শুরুতে শহরে বৃষ্টি। তাই নিজের জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ফুটপাতবাসী এক শিশু। রবিবার, ধর্মতলায়। ছবি সুদীপ্ত ভৌমিক।
বাংলার বরাতজোরই হোক বা ‘উদার’ (জ়ওয়াদ) ঘূর্ণিঝড়ের ঔদার্য, এ-যাত্রা ঝড়ঝঞ্ঝাটে বিশেষ ভুগতে হল না বাংলাকে। শুধু সেই স্বস্তি নয়, আছে প্রাপ্তিও। বঙ্গোপসাগরের ওই অতিথি হাত ধরে ‘ছদ্মশীত’-কে গাঙ্গেয় বঙ্গে পৌঁছে দিয়েছে। বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতির ক্ষত তো আছেই। তবে শীত না-হোক, এই ছদ্মশীত যে পাওয়া যাচ্ছে, সেটাও নেহাত কম নয় বলে শীতপ্রত্যাশী বাঙালির অভিমত।
বৃষ্টি নেমেছিল শনিবার রাতেই। রবিবার দিনভর কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে সূর্য দেখা দেয়নি। মেঘলা আকাশ, বৃষ্টির দরুন দিনের পারদও মাথাচাড়া দিতে পারেনি। কলকাতার সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ দিন প্রায় গা ঘেঁষাঘেঁষি করে চলছিল। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে চার ডিগ্রি বেশি থাকলেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নেমে এসেছে স্বাভাবিকের থেকে ছ’ডিগ্রি নীচে। আবহবিজ্ঞানের পরিভাষা অনুযায়ী পারদের এমন অবস্থানকে শীত বলা চলে না। তবে আমজনতার একাংশের মতে, বৃষ্টিভেজা দিনের সৌজন্যে ছদ্মশীতে সোয়েটার চাপানো গিয়েছে গায়ে!
বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় দানা বাঁধার পর থেকেই নানা আশঙ্কা বাড়ছিল। কেননা তার মুখ ঘুরে গিয়েছিল বঙ্গের দিকে। তবে প্রকৃতির খেয়ালেই সে সাগরের উপরে শক্তি হারায়। তার কারণ হিসেবে বায়ুমণ্ডলের দু’টি স্তরে বায়ুপ্রবাহের গতির ফারাক এবং সাগরজলের উষ্ণতার তারতম্যকে চিহ্নিত করেছেন আবহবিদেরা। নিস্তেজ হতে হতে জ়ওয়াদ এ দিন গভীর নিম্নচাপের চেহারা নিয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানায়, ওড়িশা উপকূল ছাড়িয়ে বঙ্গের উপকূলে আসছে গভীর নিম্নচাপ। আজ, সোমবার সকালের মধ্যে সেটি সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হবে। অর্থাৎ সে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। তার প্রভাবে কাল, মঙ্গলবারেও কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদের দু’-একটি জায়গায় ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা আছে।
এ দিন মেঘলা থাকায় কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০ ডিগ্রি। অর্থাৎ তাপমাত্রার ফারাক মাত্র ১.৬ ডিগ্রি! সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নিরিখে কাঁথি, দিঘা, ক্যানিং, মেদিনীপুর, ব্যারাকপুর রয়েছে কাছেপিঠে। বৃষ্টির সঙ্গে স্যাঁতসেঁতে হাওয়া কাঁপুনিও ধরেছে। সোমবারেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। সামান্য বাড়তে পারে দিনের তাপমাত্রা। শনিবার বিকেল থেকে এ দিন বিকেল পর্যন্ত ২৫.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে কলকাতায়। উপকূলে বৃষ্টির দাপট ছিল তুলনায় বেশি।