এমনই দেওয়াল লিখন নজরে এসেছে পূর্ব বর্ধমানের কিছু এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
চার দেওয়ালের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিজেপি-র আদি-নব্য দ্বন্দ্বের আঁচ এ বার পড়ল ভোট প্রচারের দেওয়াল লিখনেও। বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়নি। কিন্তু তার আগে থেকেই দেওয়াল দখলে নেমেছে ‘আদি’ বিজেপি। এমন ছবিই দেখা গিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলায় কয়েকটি এলাকায়। যা জেলার বিজেপি নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে সুর চ়ড়ালেও, একাধিক জেলায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভাবাচ্ছে বিজেপি নেতাদের। গত জানুয়ারির শেষ ধাপে দুই বর্ধমান জেলাতেই দলের অন্দরের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসে গিয়েছিল। বুধবারও তার আঁচ পাওয়া গেল সেই বর্ধমানেই। রাজ্যে নির্বাচনের দিন ক্ষণ এখনও ঘোষণা হয়নি। কিন্তু তার আগেই পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম এবং গলসি বিধানসভার সীমানাবর্তী এলাকায় দেওয়াল দখলে নামল ‘আদি’ বিজেপি। যা দেখে অনেকের ধারণা, রাজ্যের গেরুয়া শিবিরে আদি এবং নব্যের দ্বন্দ্ব এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী পর্যন্ত দিতে পারে বিজেপি-র ‘আদি’ গোষ্ঠী। দেওয়াল লিখন দেখে এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। গলসির কুরকুবা অঞ্চলের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা বিজেপি কর্মী দেবব্রত মণ্ডল সাফ বললেন, ‘‘আমি ১৯৯১ সাল থেকে দল করছি। আমরা বিজেপি ‘আদি’ নামে দেওয়াল দখল করে উচ্চ নেতৃত্বের কাছে বার্তা দিতে চাইছি যে, বেনোজল ঢোকায় আমরা কোণঠাসা হলেও এখনও মরিনি। এখন দেওয়াল দখল করে রাখছি। আলোচনা করে ভবিষ্যতে পদক্ষেপ করা হবে।’’
নিজেকে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর ‘মুখপাত্র’ বলে দাবি করে বিজেপি-র আউশগ্রাম বিধানসভার ৫৩ নম্বর মণ্ডলের প্রাক্তন সভাপতি স্মৃতিকান্ত মণ্ডল যেমন বললেন, ‘‘যাঁরা দলের দুর্দিনে বহু ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেও বিজেপির সংগঠন সামলে এসেছিলেন, এখন তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। আমরা সেই সব বিজেপি কর্মীরা মিলেই দেওয়াল দখল শুরু করছি।’’ দলকে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘যদি ভোটের সময় পুরনো কর্মীরা গুরুত্ব না পান, তা হলে এই সব দেওয়ালে নির্দল প্রার্থীর হয়ে ভোটপ্রচার করা হবে। তারই প্রস্তুতি চলছে।’’
স্মৃতিকান্তের ক্ষোভ বর্ধমান (সদর) সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সন্দীপ নন্দীর বিরুদ্ধে। জেলায় রয়েছে মোট ৯টি বিধানসভা। স্মৃতিকান্তের হুঙ্কার, ‘‘পুরনো কর্মীদের নিয়ে একসঙ্গে চলার মানসিকতা না দেখালে আমরা মেমারি, জামালপুর, রায়না, খণ্ডঘোষ, গলসি, আউশগ্রাম, ভাতার, বর্ধমান (উত্তর) এবং বর্ধমান (দক্ষিণ), এই ৯ টি কেন্দ্রেই নির্দল প্রার্থী দেব।’’
তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভের আঁচ পেয়ে দল নিয়ে আবেগ উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছেন সন্দীপ। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘যাঁরা বিজেপি-কে মনেপ্রাণে ভালবাসেন, তাঁরা এমন কথা বলতেই পারেন না। আমাদের দলে অনেক আদি কর্মী রয়েছেন, যাঁরা পদ না পেয়েও নিঃশব্দে কাজ করছেন। যদি বিজেপি-কে কেউ ভালবেসে থাকেন, তা হলে তাঁরা বিজেপিতেই থাকবেন।’’ দলে ‘আদি’ কর্মীদের যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন বিজেপি-র বর্ধমান (সদর) সাংগঠনিক জেলার সভাপতি। এ নিয়ে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, ‘‘বিজেপি-র দলীয় দফতরে ভাঙচুর সকলে দেখেছেন। যত ভোট এগিয়ে আসবে ততই ওদের অন্তর্কলহ আরও প্রকাশ্যে চলে আসবে।’’
প্রসঙ্গত, পূর্ব বর্ধমানে বিজেপির মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। গত ২১ জানুয়ারি বর্ধমান শহরে বিজেপির দলীয় দফতরে ব্যাপক অশান্তি ছড়ায়। তার জেরে অস্বস্তিতে পড়ে বিজেপি। এর মধ্যে ‘আদি’ গোষ্ঠীর দেওয়াল দখল ঘিরে তা আরও বাড়ল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।