প্রাথমিক শিক্ষকদের নয়া বেতনক্রম ঘোষণা করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
দেশের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেতন কাঠামো সংস্কারের দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষকদের একটি সংগঠনের অনশন আজ ১৩ দিনে পড়ল। অবশেষে বেতন সংস্কারের কথা ঘোষণাও করলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু যে অনুষ্ঠানে সে কথা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, সেখানে ডাকা হল না অনশনরত সংগঠন ‘উস্তি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এরকোনও প্রতিনিধিকে। শিক্ষামন্ত্রী যে নতুন গ্রেড পে-র কথা এ দিন জানিয়েছেন, তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে শিক্ষকদের মধ্যে।
নজরুল মঞ্চে তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের এক অনুষ্ঠানে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের গ্রেড পে বাড়িয়ে অন্তত ৩২০০ টাকা করা হচ্ছে। তবে তা যাতে ৩৬০০ টাকা করা যায়, সে প্রস্তাবও তিনি অর্থ মন্ত্রকে পাঠিয়েছেন বলে পার্থ জানান।
শিক্ষামন্ত্রীর এই ঘোষণা নিয়ে নানা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এখন প্রাথমিক শিক্ষকরা যে পে ব্যান্ডে রয়েছেন, তাতে তাঁদের পাঁচ রকমের গ্রেড পে রয়েছে—২১০০ টাকা, ২৩০০ টাকা,২৬০০ টাকা, ২৯০০ টাকা এবং ৩১০০ টাকা। পে ব্যান্ড-টু থেকে যদি এ বার প্রাথমিক শিক্ষকদের পে ব্যান্ড-থ্রি-তে নিয়ে যাওয়া হয়, তা হলেও গ্রেড পে অন্তত চার রকমের হওয়ার কথা— ৩২০০ টাকা, ৩৬০০ টাকা, ৩৯০০ টাকা, ৪১০০ টাকা। তাই গ্রেড পে অন্তত ৩২০০ টাকা করে দেওয়া এবং সম্ভব হলে তা ৩৬০০ টাকায় নিয়ে যাওয়া বলতে পার্থবাবু ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা প্রাথমিক শিক্ষকদের অনেকের কাছেই অস্পষ্ট।
উস্তির কোর কমিটি সদস্য অনুপ সাহুর কথায়, ‘‘আমাদের যদি পে ব্যান্ড-থ্রিতে নিয়ে যাওয়া হয়, তা হলে তো এমনিতেই কারও গ্রেড পে ৩২০০ টাকা, কারও ৩৬০০ টাকা, কারও আবার তার চেয়েও বেশি হবে। তা হলে অন্তত ৩২০০ টাকা, সম্ভব হলে ৩৬০০ টাকা করার অর্থ কী? শিক্ষামন্ত্রী কি চার রকম গ্রেড পে-র নিয়ম ভেঙে সবাইকে একই গ্রেড পে দিতে চাইছেন নাকি? আমরা বুঝতে পারছি না।’’
আরও পডু়ন: রাজ্যেও কি মহার্ঘ ভাতা কেন্দ্রীয় হারেই? কাল রায় দেবে স্যাট
১৩ দিন ধরে অনশনে থাকা সংগঠন উস্তির কোনও প্রতিনিধিকে ডেকে বা উস্তির নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করে এই বেতন বৃদ্ধির কথা জানানো উচিত ছিল বলেও সংগঠনটির দাবি। তাতে সমস্যা থাকলে পার্থ চট্টোপাধ্যায় কোনও প্রশাসনিক মঞ্চ থেকে ঘোষণাটা করতে পারতেন বলেও এই সংগঠন মনে করছে। কিন্তু সে রাস্তাগুলোর কোনওটাতেই না হেঁটে যে ভাবে নিজের দলের শিক্ষক সংগঠনের সভায় পার্থ ঘোষণা করলেন বেতন সংস্কারের কথা, তাতে উস্তির নেতৃত্ব অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। উস্তির তরফে জানানো হয়েছে, আন্দোলন অব্যাহত থাকছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন যে ঘোষণা করেছেন, তাতে বেতন কাঠামোর বিষয়ে কোনও স্পষ্ট ধারণাই পাওয়া যাচ্ছে না বলে অনশনকারী সংগঠন মনে করছে। তাই অনশন চালিয়ে যাওয়ার কথা তাঁরা ঘোষণা করেছেন।
পার্থবাবুর ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিজেপির প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইমারি ট্রেনড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনও। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি পিন্টু পাড়ুই বলেন, ‘‘নজরুল মঞ্চের অনুষ্ঠানে আজ পার্থ চট্টোপাধ্যায় আমাদের সংগঠনকেও ডেকেছিলেন। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ ওই সভায় যাওয়ার অনুমতিও আমাদের দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আমরা জানতে পারি, নজরুল মঞ্চের অনুষ্ঠান কোনও সরকারি অনুষ্ঠান নয়। ওটা তৃণমূলের নিজস্ব প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের কর্মসূচি। তাই আমরা সেখানে যাইনি।’’
আরও পড়ুন: কোন্নগরে আক্রান্ত অধ্যাপককে ফোন মমতার, কলেজে গিয়ে ক্ষমা চাইলেন তৃণমূল নেতা
বেতন বৃদ্ধি সংক্রান্ত যে ঘোষণা পার্থ চট্টোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার করেছেন, তা নিয়েও বিজেপির সংগঠন কিছুটা সন্দিহান। পিন্টু বলেন, ‘‘গ্রেড পে যদি ৩৬০০ টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়, তা হলে আপাতত আমরা মেনে নিতে রাজি আছি। কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের আরও একটা দাবি রয়েছে।’’ পিন্টু পাড়ুই জানান, মুখ্যমন্ত্রী নিজে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, পিটিটিআই সার্টিফিকেট থাকা সত্ত্বেও যাঁরা চাকরি থেকে বঞ্চিত, তাঁদের চাকরি হবে। কিন্তু এখনও কিছুই হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। অবিলম্বে তাঁদের চাকরির ব্যবস্থা করার কথা ঘোষিত না হলে এক সপ্তাহ পর থেকেই বিজেপির সংগঠন পথে নামবে বলে পিন্টু পাড়ুই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এ সব অভিযোগ এবং হুঁশিয়ারিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘‘গ্রেড পে বাড়িয়ে ৩২০০ টাকা করতে বলেছি। যাতে ৩৬০০ টাকা করা যায়, সে বিষয়েও আলাপ-আলোচনা চলছে। আর কত বাড়াব? দ্বিগুণ করতে হবে নাকি!’’