(বাঁ দিকে) অর্পিতা মুখোপাধ্যায় এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন পেলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। সোমবার কলকাতার বিচার ভবন তাঁকে জামিন দিয়েছে। ২০২২ সালের ২২ জুলাই গ্রেফতার হয়েছিলেন পার্থ এবং অর্পিতা। প্রায় ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার হওয়ার পরেই গ্রেফতার হয়েছিলেন অর্পিতা। সেই গ্রেফতারির ৮৫৭ দিন পর জামিনে ছাড়া পেলেন তিনি। যদিও পার্থের জামিন মামলা এখনও ঝুলে।
আদালত সূত্রে খবর, পাঁচ লক্ষ টাকার বন্ডের বিনিময়ে অর্পিতাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়েছে কয়েকটি শর্তও। যেমন— মামলা চলাকালীন বাইরে কোথাও যেতে পারবেন না অর্পিতা। জমা রাখতে হবে পাসপোর্টও।
শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে ২০২২ সালের ২২ জুলাই দক্ষিণ কলকাতার নাকতলায় পার্থের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিল ইডি। দীর্ঘ তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত অর্পিতার টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটেও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা হানা দিয়েছিল। টালিগঞ্জের একটি আবাসনে অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে নগদ ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছিল তারা। একই সঙ্গে উদ্ধার হয় প্রচুর বিদেশি মুদ্রা এবং সোনার গয়নাও। এর পরে ওই বছরেরই ২৭ জুলাই বেলঘরিয়ার একটি আবাসনে অর্পিতার নামে থাকা দু’টি ফ্ল্যাট থেকেও মোট ২৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা নগদে উদ্ধার করে ইডি। সঙ্গে প্রচুর টাকার গয়নাও। ইডির দাবি, অর্পিতার দু’টি ফ্ল্যাট থেকে নগদে মোট ৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ৫ কোটি ৮ লাখ টাকার গয়না উদ্ধার হয়েছিল। সঙ্গে সাতটি ভিন্দেশের মুদ্রাও।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একমাত্র অর্পিতার কাছ থেকেই নগদ টাকা উদ্ধার করেছিল তদন্তকারী সংস্থা। এ ছাড়া আর কোনও অর্থ উদ্ধার হয়নি কোনও জায়গা থেকে। শুধু অর্পিতার কাছ থেকে নগদ অর্থ উদ্ধার হওয়ার অনেকেই মনে করেছিলেন, নিয়োগ মামলায় তাঁর জামিন পাওয়া কঠিন হবে! কিন্তু দেখা গেল, পার্থের আগে অর্পিতাই জামিন পেলেন।
পার্থের জামিনের বিষয়টি নিয়ে একমত হতে পারেননি কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়। ডিভিশন বেঞ্চের কোনও মামলায় বিচারপতিরা একমত হতে না পারলে মামলাটি কোন বেঞ্চে যাবে, তা স্থির করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি তৃতীয় কোনও বেঞ্চে মামলাটি ফয়সালার জন্য পাঠান। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম সোমবার ওই মামলাটি পাঠিয়েছেন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর একক বেঞ্চে। চলতি সপ্তাহেই ওই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
মায়ের মৃত্যু হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার প্যারোলে মুক্তি পেয়েছেন অর্পিতা। পাঁচ দিনের জন্য তাঁকে প্যারোলে মুক্তি দিয়েছিল আদালত। তার মেয়াদ শেষ হতে না-হতেই এ বার জামিনে ছাড়া পেলেন অর্পিতা।