পার্শ্বশিক্ষকদের উপরে পুলিশের লাঠি চালানোর প্রতিবাদে কল্যাণী থানার সামনে অবস্থান বিক্ষোভ। প্ররবিবার কল্যাণীতে। ছবি: প্রণব দেবনাথ
পুলিশের লাঠির মুখে শনিবার উঠে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা। রবিবার ফের দিনভর আন্দোলন এবং কল্যাণী থানার সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ করেন পার্শ্ব শিক্ষকেরা। পুলিশকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ আপাতত বিক্ষোভ-ধর্না তুলে নিয়েছেন তাঁরা।
পশ্চিমবঙ্গ পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক ভগীরথ ঘোষ বলেন, ‘‘কাল (সোমবার) কোনও পার্শ্ব শিক্ষক স্কুলে কাজ করবেন না। তার পরের দু’দিন স্কুলে যাবেন কালো ব্যাজ পরে। তিন দিন পরে কলকাতায় ফের অবস্থান-বিক্ষোভ হবে।’’ ভগীরথবাবুর অভিযোগ, পুলিশ যখন পার্শ্ব শিক্ষকদের অনশন-মঞ্চে লাঠি চালায়, সেই সময় ওই শিক্ষকেরা জাতীয় পতাকা নিয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইছিলেন। জাতীয় পতাকা কেড়ে নিয়ে তাঁদের লাঠিপেটা করে পুলিশ।
এ দিন থানার সামনে ধর্নায় ছিলেন কয়েক হাজার শিক্ষক। ভগীরথবাবু শনিবারের ঘটনা নিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর দাবি, যে-পাঁচ জন আন্দোলনকারীকে শনিবার গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের জামিনের ব্যবস্থা করতে হবে পুলিশকেই। রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার ভিএসআর অনন্তনাগ বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত হবে। তদন্তে যা উঠে আসবে, সেই অনুসারে পদক্ষেপ করা হবে।’’ আলোচনার জন্য কল্যাণীর মহকুমাশাসক ধীমান বারুই এ দিন দুপুরে থানায় যেতে গেলে আন্দোলনকারীরা বাধা দেন।
শিক্ষক সংগঠনের পক্ষে কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য ও বিশ্বজিৎ মিত্র, তরুণকান্তি নস্কর জানান, সোমবার জেলা স্তরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে। রাজ্য পার্শ্ব শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সম্পাদক অভিজিৎ ভৌমিক বলেন, ‘‘শনিবারের ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর আমরা ধর্মতলায় মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়াব।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী রবিবার কল্যাণী গিয়ে আক্রান্ত পার্শ্ব শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক শিক্ষক, এসএসকে এবং এমএসকে শিক্ষক, শিক্ষাবন্ধু, এএনএম নার্স, পার্শ্ব শিক্ষক— সরকার কি এঁদের শুধু মারতেই শিখেছে? এঁদের দাবি মানার কোনও দায় কি সরকারের নেই?’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, ‘‘রাতের অন্ধকারে রাষ্ট্রশক্তির যে-ঘৃণ্য আক্রমণ নেমে এল, তা সভ্যতার কলঙ্কজনক অধ্যায়।’’ লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীর কটাক্ষ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী, আপনি বরং একটা আইন পাশ করে দিন— তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষ ক্ষোভ জানাতে পারবেন না। কেউ কোনও দাবি নিয়ে আন্দোলনও করতে পারবেন না!’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার সব শিক্ষকের সঙ্গেই এই আচরণ করছে। পার্শ্ব শিক্ষকদের আন্দোলনের পাশে আছি আমরা।’’
‘‘বর্তমান সরকার পার্শ্ব শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা আগের চেয়ে বাড়িয়েছে। বিজেপি এবং সিপিএম যে তাঁদের ভুল বোঝাচ্ছে, সে-কথা বুঝতে হবে ওই শিক্ষকদেরও,’’ বলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।