বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কাজে লাগানোর উপরে জোর দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। গত কাল দিল্লিতে নড্ডার সঙ্গে রাজ্যের বিজেপি সাংসদদের বৈঠকে পঞ্চায়েত স্তরে একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনার মতো একাধিক প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষ যে ক্ষুব্ধ সেই বিষয়টি উঠে আসে। তৃণমূলকে পরাস্ত করতে মানুষের ওই ক্ষোভকেই হাতিয়ার করার উপরে জোর দিয়েছেন নড্ডা। আমজনতার ক্ষোভ যাতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটের বাক্সে প্রতিফলিত হয় সে জন্য সাংসদদের মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে আগামী লোকসভার জন্য ২৪টি আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দিয়েছেন নড্ডা। যদিও বিজেপির এক সাংসদ আজ দাবি করেন, তাঁরা ৩০টি আসনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে লড়াইয়ে নামতে চাইছেন।
তবে সংগঠনের দুর্বলতা, তৃণমূল স্তর পর্যন্ত সংগঠন পৌঁছতে ব্যর্থতা, গোষ্ঠী কলহ জারি থাকায় সামগ্রিক ভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নড্ডা। সূত্রের মতে, বাংলার অধিকাংশ সাংসদের কাজেই খুশি নন তিনি। সূত্রের খবর, বৈঠকে নড্ডা জানতে চান সাংসদেরা নিজেদের এলাকায় কতটা সময় দেন? এলাকায় কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ নিয়েও নড্ডার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় সাংসদদের। সাংসদদের কারণে-অকারণে দিল্লি আসা নিয়েও অসন্তুষ্ট কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁদের স্পষ্ট নির্দেশ, অনেক হয়েছে। এ বার নিজের এলাকায় ঘুরুন। কর্মীদের সঙ্গে বসুন। বুথে যান। কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে প্রচার করুন। সূত্রের দাবি, জেতার সম্ভাবনা ও দলীয় শক্তির ভিত্তিতে পঞ্চায়েতগুলিকে ‘এ, বি, সি’ শ্রেণিতে ভাগ করে প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় বৈঠকে। সেই সঙ্গে প্রত্যেক সাংসদকে নিজের এলাকা ছাড়াও ২০১৯ সালের নির্বাচনের হিসেবে একটি করে হেরে যাওয়া কেন্দ্রের দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে।
পুজোর আগেই কেন্দ্রীয় প্রবাস কর্মসূচি উপলক্ষে রাজ্যে এসেছিলেন বিজেপির ভিন্ রাজ্যের সাংসদ ও বেশ কয়েক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সেই রিপোর্ট কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে জমা পড়েছে। সেই রিপোর্ট ধরে ধরে বৈঠকে সাংসদদের বার্তা দেন নড্ডা। সূত্রের খবর, রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৯ সালের লোকসভায় জেতা ১৮ আসনের অধিকাংশতেই ফের জয়ের সম্ভাবনা কম বিজেপি শিবিরের। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বার্তা, ২০২৪-এর ফাইনাল লড়াইয়ে কোনও রকম গাফিলতি সহ্য করা হবে না। পশ্চিমবঙ্গে ২৪টি আসনে জেতার কথা মাথায় রেখে এখন থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে গোষ্ঠী কোন্দল মিটিয়ে ফেলার উপরে। সদ্য হিমাচলপ্রদেশে গোষ্ঠী কোন্দলের কারণে বিধানসভা নির্বাচনে হারতে হয়েছে বিজেপিকে। নড্ডা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, রাজ্যে কোনও ধরনের গোষ্ঠী কোন্দল মেনে নেওয়া হবে না। দলের শীর্ষ নেতাদের এখন থেকেই হাতে-হাত মিলিয়ে কাজ করার উপরে জোর দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি পুরনো কর্মীদের ফিরিয়ে আনার প্রশ্নে বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর উদাসীনতার বিষয়টিও নিয়ে বৈঠকে সরব হন একাধিক সাংসদ। নড্ডা নতুনদের সঙ্গে পুরনোদের নিয়েই কাজ করায় জোর দেন। দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের বিষয়টিকে আলাদা ভাবে নজর রাখার নির্দেশ দেন নড্ডা।