মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
কলকাতা পুরসভার শিক্ষা বিভাগে শৌচাগার সংস্কার, দরপত্র ছাড়াই বর্ষাতি ও স্কুলপোশাক কেনা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে আগেই। ইতিমধ্যেই পুর কর্তৃপক্ষ শিক্ষা বিভাগের তদানীন্তন তিন আধিকারিককে কারণ দর্শাতে চিঠি ধরিয়েছেন। ওই তিন জনের এক জন, তদানীন্তন সিনিয়র এডুকেশন অফিসার রুমানা খাতুন। ৫ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইমেল করেছেন রুমানা। ওই চিঠিতে তাঁর অভিযোগ, তিনি সংখ্যালঘু মহিলা আধিকারিক বলেই হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে রুমানা মেয়রের অফিসে কর্মরত ও ম্যানেজার পদে আসীন, মেয়রের ওএসডি-কে সরাসরি দায়ী করে মুখ্যমন্ত্রীকে তিন পাতার চিঠি ইমেল করেছেন। তাতে তিনি জানিয়েছেন, মিথ্যা ও মনগড়া তথ্য পরিবেশন করে মেয়রের অফিসে কর্মরত ওই ম্যানেজার পুরসভার ভিজিল্যান্স এবং সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুর কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করছেন।
মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে রুমানা উল্লেখ করেছেন, ২০১২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৬ জুলাই পর্যন্ত তিনি পুরসভার শিক্ষা দফতরে শিক্ষা আধিকারিক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। এর পরেই তাঁকে বালিগঞ্জের আইইউএম (ইনস্টিটিউট অব আর্বান ম্যানেজমেন্ট)-এর ম্যানেজার পদে বদলি করা হয়। ওই চিঠিতে তিনি বলেছেন, ‘‘মেয়রের অফিসে কর্মরত ম্যানেজারের মদতে শিক্ষা দফতর থেকে বেআইনি ও অযৌক্তিক ভাবে বদলি হয়েছিলাম। যে কারণে পুরসভা পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ করার যাবতীয় স্বপ্ন আমার ভেঙে যায়। সেই সময় থেকে মানসিক নির্যাতন সহ্য করে চলেছি।’’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে পুরসভা পরিচালিত ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শৌচাগার নির্মাণে ৩৮ লক্ষ টাকার গরমিল ধরা পড়ায় পুর ভিজিল্যান্স বিভাগ ওই দফতরের কাছে ইতিমধ্যেই রিপোর্ট তলব করেছে। পাশাপাশি, ওই সময়েই পড়ুয়াদের জন্য দরপত্র ছাড়া প্রায় দু’কোটি টাকার বর্ষাতি ও স্কুলপোশাক কেনার ক্ষেত্রেও গরমিল প্রকাশ্যে এসেছে। এই বিষয়ে পুরসভার অডিট বিভাগ বিস্তারিত জানতে চেয়েছে। এই দুই গরমিলের সময়ে পুরসভার শিক্ষা দফতরের সিনিয়র এডুকেশন অফিসার ছিলেন রুমানা খাতুন। পুর কর্তৃপক্ষ আগেই রুমানা এবং আরও দুই অবসরপ্রাপ্ত পুর আধিকারিককে শোকজ় করেছেন। পুরসভার শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, তিন জনই কারণ দর্শানোর চিঠির উত্তর পুরসভায় জমা দিয়েছেন। পুরসভা সূত্রের খবর, ওই তিন আধিকারিকের জবাবের পাশাপাশি ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের রিপোর্ট মিলিয়ে দেখা হবে। তার পরে পুর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।
এ দিকে, মুখ্যমন্ত্রীকে ইমেল করা চিঠি প্রসঙ্গে রুমানাকে একাধিক বার ফোন ও এসএমএস করা হলেও উত্তর মেলেনি। আবার মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা রুমানার চিঠিতে অভিযুক্ত হিসাবে উল্লেখ থাকা মেয়রের ওএসডি কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে একাধিক বার ফোন এবং এসএমএস করা হলেও উত্তর দেননি তিনি।
কলকাতা পুরসভা পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শৌচাগার নির্মাণে অনিয়মের বিষয়টি ২০১৭ সালে দু’বার তদানীন্তন যুগ্ম পুর কমিশনারকে জানিয়েছিল পুরসভার বাম প্রভাবিত কর্মী সংগঠন ‘কলিকাতা পৌর শিক্ষক ও কর্মী সঙ্ঘ’।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অশোককুমার চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘শৌচাগার-দুর্নীতি নিয়ে আমরা ছ’বছর আগে পুরসভাকে সাবধান করেছিলাম। কিন্তু সে কথায় কর্ণপাত করা হয়নি। দোষীদের শাস্তির দাবিতে ফের আমরা মেয়রকে চিঠি লিখছি। এত বড় দুর্নীতি-কাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবিতে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব।’’