গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
রাজ্যের প্রথম ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হল মেডিকা সুপার স্পেসালিটি হাসপাতালে। রাজ্য তথা পূর্ব ভারতের প্রথম ফুসফুস প্রতিস্থাপনের জন্য সোমবার সকাল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রস্তুতি। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য সময় অত্যন্ত জরুরি বিষয়। সঠিক এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অঙ্গ প্রতিস্থাপন না করা গেলে পুরো প্রস্তুতিই মাটি হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রেও সঠিক সময়ে যাতে কলকাতার চিকিৎসক দল সুরত পৌঁছতে পারেন এবং সুরত থেকে অঙ্গ নিয়ে কলকাতা ফিরতে পারেন, তার জন্য সুরত যাওয়া এবং কলকাতা ফেরার দুই উড়ান কর্তৃপক্ষই তাদের নির্দিষ্ট সময়ের থেকে বেশি প্রাধান্য দেন ফুসফুস রক্ষায়। চিকিৎসকদের নিয়ে যাওযার সুরতগামী বিমান ছাড়ে সময়ের আগেই, আবার সুরতে ফুসফুস নিয়ে চিকিৎসকরা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকে কলকাতা ফেরার বিমানও।
বছর ৪৬-এর ফুসফুস গ্রহীতাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফুসফুস প্রতিস্থাপনের জন্য গ্রহীতা এবং দাতার রক্তের গ্রুপ মিলিয়ে দেখা হয় তেমনি দাতার অঙ্গ প্রতিস্থাপন যোগ্য কি না সেটাও দেখেন চিকিৎসকরা। কলকাতার এই ফুসফুস গ্রহীতার ক্ষেত্রে আগে দু’বার একই রক্ত গ্রুপের ফুসফুস পাওয়া গেলেও কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা যায়নি। তা ছাড়া করোনার আক্রমণে গ্রহীতার একদিকের ফুসফুস ফেটে গিয়েছিল এবং অন্যদিকের ফুসফুসে ফাইব্রোসিস হয়ে যায়। যার জন্য গত ১০৬ দিন ধরে একমো সাপোর্টে রয়েছেন ফুসফুস গ্রহীতা। এই অবস্থায় ফুসফুস প্রতিস্থাপন ছাড়া অন্য উপায় ছিল না বলে জানান চিকিৎসকরা।
মঙ্গলবার হাসপাতালের তরফ থেকে চিকিৎসক কুণাল সরকার জানান, চিকিৎসকরা যেমন সঠিক সময়ে ফুসফুস আনার জন্য উঠেপড়ে লাগেন তেমনই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল উড়ান দুই সংস্থাও। কলকাতা থেকে চিকিৎসকদের একটি দল সুরত যায় অস্ত্রোপচার করে ফুসফুস আনতে। সকালের দিকে কলকাতা থেকে যাওয়ার সময়ও সুরতগামী বিমান সময়ের থেকে প্রায় ১৫ মিনিট আগেই কলকাতা থেকে রওনা দিয়ে দেয়। সুরতের ৫২ বছরের ওই দাতার লিভার এবং কিডনিও দান করা হয়। তাই এ ক্ষেত্রে সুরতের চিকিৎসকদের সঙ্গেও সময়ের তালে তাল মিলিয়ে এগোতে হচ্ছিল বলে জানান কলকাতার এক চিকিৎসক। আবার সন্ধের সময় যে বিমানে চিকিৎসকরা ফুসফুস নিয়ে কলকাতা ফেরেন সেই বিমানও সুরত থেকে ছাড়তে প্রায় ২০মিনিট দেরি করে। ওই বিমান অপেক্ষা করে ছিল কত ক্ষণে ফুসফুস নিয়ে চিকিৎসকরা আসবেন সে জন্য। সুরত থেকে ওই বিমানে ফুসফুস না আনা গেলে অনেক দেরি হয়ে যেত, অন্য বিমানের জন্য অপেক্ষা করতে গেলে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের সময় পেরিয়ে যেত বলে জানান এক চিকিৎসক।
ফুসফুস আনতে যাতে সময় নষ্ট না হয় তার জন্য সুরত এবং কলকাতা দু’রাজ্যেই সড়ক পথে গ্রিন করিডর করা দেওয়া হয়েছিল। সুরতের `ব্রেনডেথ’ হওয়া ব্যক্তির পরিবার প্রতিস্থাপনের ফুসফুস বহনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে সুরতের বিমানবন্দর পর্যন্ত এসেছিলেন। ওই দলের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘ফুসফুস দাতার পরিবার বিমানে ওঠার আগে পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল ওঁরা পরিবারের সদস্যকেই বিমানে তুলতে এসেছেন।”