প্রতীকী ছবি।
গত সপ্তাহে লগ্নির বাজার ছিল উত্তেজনায় ঠাসা। সেনসেক্স প্রথম পা রাখে ৫৪ হাজারে। পাঁচ দিনের মধ্যে টানা চারটি লেনদেনে মোট ১৬৯১ পয়েন্ট উঠে পৌঁছয় ৫৪,২২৮ অঙ্কে। রেকর্ড গড়ে নিফ্টি-ও ছোঁয় ১৬ হাজার। সাপ্তাহিক উত্থান ৪৭৬। পা ১৬,২৩৮-তে। অর্থনীতি বা অতিমারির পরিস্থিতি যেমনই হোক, বাজারের দৌড় থামছে না। আর এরই মধ্যে হু হু করে বাড়ছে সেখানে লগ্নিকারীর সংখ্যা এবং তাঁদের সম্পদ। বিএসই-তে নথিবদ্ধ লগ্নিকারী এখন প্রায় ৭.৬১ কোটি। মোট সম্পদ ২৩৯.৩৬ লক্ষ কোটি টাকা। বাড়ছে ফান্ডে লগ্নির সংখ্যাও। বহু মানুষ শেয়ার নির্ভর ফান্ডে লগ্নি করছেন এসআইপি পথে, যাতে ঝুঁকি কম রাখা যায়।
লগ্নির জগতে এখন দু’টি শ্রেণি। প্রথমটি, অতি রক্ষণশীলদের একাংশ। যাঁরা ঝুঁকি এড়াতে ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে টাকা জমাতে অভ্যস্ত হলেও, এখন ঝুঁকছেন শেয়ার-ফান্ডে। কারণ, ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের সুদ কমে আসা। যদিও তাঁদের বড় একটি অংশ এখনও ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে নিশ্চিত রিটার্নের ঠিকানা ছাড়তে নারাজ। দ্বিতীয় শ্রেণির একাংশের ঝুঁকি নিয়ে লগ্নি করা নেশা, অন্য অংশ বেশি আয়ের আশায় সাহসী। তাঁরা শেয়ার, ফান্ডে ভাগ করে টাকা রাখেন। দু’টি ক্ষেত্রই অস্বাভাবিক রিটার্ন দিয়েছে ১৫ মাসে। ফলে সেগুলির টান প্রবল। শেয়ার বাজারে টাকা খাটিয়ে ভাল লাভ করেছে পিএফ এবং পেনশন ফান্ডগুলিও। মুনাফা দিয়েছে ইটিএফের (এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) লগ্নি। বাজার তেজি থাকলে এবং সুদ আরও কমলে শেয়ার এবং ফান্ডে পা রাখতে পারেন আরও লগ্নিকারী।
তবে গত সপ্তাহে বহু ছোট-মাঝারি শেয়ার নেমেছে। শুক্রবার রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ একই রাখায় এবং চলতি অর্থবর্ষে মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস আগের (৫.১%) থেকে বাড়ানোয় (৫.৭%) বাজার নামে। যদিও তার আগেই তৈরি হয়েছে আরও এক তাক লাগানো পরিসংখ্যান— গত ৩১ মার্চ সেনসেক্স ছিল ৪৯৫০৯ অঙ্কে। প্রায় চার মাসে ৪৭১৯ পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ৫৪,২২৮।
গত বছর প্রথম লকডাউন ঘোষণার দিন (২৩ মার্চ) সেনসেক্স নেমেছিল ৩৯৩৪, যা সূচকের একদিনে বৃহত্তম পতন। তলিয়ে যায় ২৫,৯৮১-তে। সেখান থেকে প্রায় ১৬ মাসে ১১০% বেড়ে এখন সে ৫৪ হাজার পার। এই সময়ে অনেক শেয়ার ২০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। বাজারের ঐতিহাসিক লাফের প্রতিফলন স্পষ্ট ইকুইটি (শেয়ার) মিউচুয়াল ফান্ডে। এমন বহু ফান্ড ১০০ শতাংশের বেশি রিটার্ন দিয়েছে ওই মেয়াদে।
হালে সূচককে শক্তি জুগিয়েছে একগুচ্ছ খবর। যেমন, জুলাইয়ে কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি ও ৪৭.১৯% রফতানি বৃদ্ধি। যদিও দুই হারই গত বছর জুলাইয়ে নিচু ভিতের নিরিখে। একই কারণে যাত্রিগাড়ির বিক্রি বৃদ্ধির হারও ৪৭%। স্বস্তি দিয়ে এপ্রিল-জুনে স্টেট ব্যাঙ্কের নিট লাভ ৫৫.২৪% বেড়ে পৌঁছেছে ৬৫০৪ কোটি টাকায়। কমেছে অনুৎপাদক সম্পদ।
(মতামত ব্যক্তিগত)