Recruitment Scam

এজেন্টদের থেকে সরাসরি টাকা তুলতেন কুন্তলও! আট কোটির ‘হিসাব’ ইডির হাতে, অনুমান, অঙ্ক বাড়বে

ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন জায়গার এজেন্টরা চাকরি করিয়ে দেওয়ার নাম করে ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলতেন। তার পর সেই টাকা তাঁরা পৌঁছে দিতেন কুন্তলের কাছে।

Advertisement

সারমিন বেগম

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:৫১
Share:

‘অযোগ্য চাকরিপ্রার্থী’ নিয়োগে কুন্তলের নিজস্ব এজেন্টদের তথ্যও তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। ফাইল চিত্র।

এ বার কুন্তল ঘোষের নিজস্ব এজেন্টদেরও সন্ধান মিলল। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সূত্রে খবর, শুধু তাপস মণ্ডল মারফতই নয়, ‘অযোগ্য চাকরিপ্রার্থী’ নিয়োগে কুন্তলের নিজস্ব এজেন্টদের তথ্যও তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। এ রকম ২২ জনকে তাঁরা চিহ্নিত করেছেন। তদন্তকারীদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই এজেন্টদের দাবি, বিভিন্ন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে তাঁরা টাকা তুলে কুন্তলকে দিয়েছেন। সেই এজেন্টদের বয়ানের ভিত্তিতেই কোটি কোটি টাকার হিসাবের হদিস মিলেছে।

Advertisement

ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন জায়গার এজেন্টরা চাকরি করিয়ে দেওয়ার নাম করে ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলতেন। তার পর সেই টাকা তাঁরা পৌঁছে দিতেন কুন্তলের কাছে। নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় যুব তৃণমূল নেতা কুন্তলকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে ইডি। এখনও পর্যন্ত ‘কুন্তলের হয়ে কাজ করা’ ২২ জন এজেন্টের হদিস পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের একে একে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সংস্থার ওই সূত্রের দাবি, চাকরির টাকা মূলত নগদে লেনদেন হয়েছে। হুগলির এক এজেন্ট জিজ্ঞাসাবাদের সময় ইডিকে জানিয়েছেন, কুন্তলকে তিনি ৩ কোটি ৪ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। ২০১৪ এব‌ং ২০১৭ সালের প্রাথমিকে নিয়োগের পরীক্ষা (টেট) মিলিয়ে অন্তত ৬২ জনের থেকে ওই টাকা তুলেছিলেন তিনি।

শুধু হুগলি নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যে কুন্তলের একাধিক এজেন্ট ছিলেন, সে ব্যাপারেও এক প্রকার নিশ্চিত ইডির আধিকারিকেরা। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই কুন্তলের হয়ে কাজ করা ৯ জন এজেন্টকে তলব করা হয়েছে। বয়ান নেওয়া হচ্ছে তাঁদের। ইডির ওই সূত্রের দাবি, হুগলির এক এজেন্টের কাছ থেকে কুন্তল যেমন ৩ কোটি ৪ লক্ষ টাকা পেয়েছেন, তেমনই অন্য এক এজেন্ট জেরায় দাবি করেছেন, ওই যুব তৃণমূল নেতাকে তিনি প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৮ কোটি টাকার হিসাবের হদিস মিলেছে খবর তদন্তকারীদের সূত্রে। তদন্ত যত এগোবে, টাকার অঙ্ক আরও বাড়তে থাকবে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

তদন্তকারীদের ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, কুন্তলের হয়ে কাজ করা এজেন্টরা যে সব প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলেছেন, তাঁদের নামের একটি তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কেউ চাকরি পেয়েছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত তাপস জেরার সময় দাবি করেছেন, তিনি সব মিলিয়ে কুন্তলকে ১৯ কোটি ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। বিভিন্ন এজেন্টরা তাঁর অফিসে সেই টাকা পৌঁছে দিয়েছেন। পরে সেই নগদ অর্থ কুন্তলকে দেওয়া হয়েছে। জেরায় তাপসের আরও দাবি, তিনি টাকার হিসাব ডায়েরিতে লিখে রাখতেন। টাকা যে কুন্তল পেয়েছেন, তা বোঝানোর জন্য তাঁকে দিয়ে সইও করিয়ে নিতেন বলে দাবি করেছেন তাপস। তাঁর সেই ডায়েরির কয়েকটি পৃষ্ঠা আনন্দবাজার অনলাইনের হাতেও এসেছে। তাতে কোথাও সংক্ষিপ্ত সই (ইনিশিয়াল সিগনেচার), আবার কোথাও পূর্ণাঙ্গ স্বাক্ষর রয়েছে। যদিও সেই সব সই কুন্তলই করেছেন কি না, তা যাচাই করে দেখেনি আনন্দবাজার অনলাইন। কুন্তল অবশ্য এই সব অভিযোগ প্রথম থেকেই অস্বীকার করেছেন।

ইডির দাবি, শুধু প্রাথমিকের জন্য প্রায় ৫ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা তাপস মারফত কুন্তলের কাছে পৌঁছেছে। এই সংক্রান্ত একটি তালিকা তাপস ইডিকে দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তদন্তকারীদের ওই সূত্রে জানা গিয়েছে, এজেন্টরা কেউ তাপসকে টাকা দিয়েছেন, কেউ কেউ আবার তাপস-কুন্তল জুটির হয়ে টাকার লেনদেন করেছেন। সেই সব এজেন্টদের সঙ্গেও কথা বলা হতে পারে।

কুন্তলের অবশ্য দাবি, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। তাপসই ষড়যন্ত্র করেছেন। ইডি এবং সিবিআইয়ের নাম করে তাঁর কাছ থেকে টাকা চেয়েছেন তাপস-ঘনিষ্ঠ নীলাদ্রি ঘোষ। তাপসের আর এক ঘনিষ্ঠ গোপাল দলপতিও টাকা তুলেছেন চাকরিপ্রার্থীদের থেকে। ওই মামলায় নীলাদ্রিও গ্রেফতার হয়েছেন। গোপালকেও ইডি এবং সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। সিবিআই সূত্রে খবর, গোপালকে আবার ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু দিন দুয়েক ধরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কুন্তল, তাপস এবং নীলাদ্রিকে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। আগামী ৯ মার্চ পর্যন্ত তাঁদের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। আদালত থেকে বেরোনোর সময় আবারও গোপালের দিকেই আঙুল তোলেন কুন্তল। দাবি করেন, সব টাকা রয়েছে গোপাল ওরফে আরমান গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। তবে হৈমন্তীর কাছে যে টাকা রয়েছে, তা নিয়োগ দুর্নীতির টাকা কি না, তা খোলসা করতে চাননি কুন্তল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement