নিজের বাড়িতে খুন জেলা তৃণমূল নেতা

বাগডোগরা থানার পানিঘাটায় শুক্রবার গভীর রাতে নিজের বাড়িতে খুন হলেন তৃণমূলের এক জেলাস্তরের নেতা। নিহতের নাম রবিন কর্মকার(৪৮)। তিনি তৃণমূলের কিষান খেতমজুর কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি ছিলেন। রবিনবাবু জমি কেনাবেচার ব্যবসা করতেন বলে জানা গিয়েছে। পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে কথা পুলিশের প্রাথমিক সন্দেহ, জমি সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেন নিয়ে গোলমালের জেরেই খুন করা হয়েছে তাঁকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৩৮
Share:

নিহত রবিন কর্মকারের শোকার্ত পরিজন। নিজস্ব চিত্র।

বাগডোগরা থানার পানিঘাটায় শুক্রবার গভীর রাতে নিজের বাড়িতে খুন হলেন তৃণমূলের এক জেলাস্তরের নেতা। নিহতের নাম রবিন কর্মকার(৪৮)। তিনি তৃণমূলের কিষান খেতমজুর কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি ছিলেন। রবিনবাবু জমি কেনাবেচার ব্যবসা করতেন বলে জানা গিয়েছে। পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে কথা পুলিশের প্রাথমিক সন্দেহ, জমি সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেন নিয়ে গোলমালের জেরেই খুন করা হয়েছে তাঁকে। অজ্ঞাতপরিচয় তিনজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে নিহতের পরিবার।

Advertisement

খবর পেয়েই সকালে নিহত দলীয় নেতার বাড়িতে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। পরিবারের লোকজনকে সান্ত্বনা দেন তিনি। পরে মন্ত্রী বলেন,“ ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। কী কারণে তাঁকে খুন করা হয়েছে তা পুলিশ খুঁজে বার করবে। কে বা কারা যুক্ত সেটাও পুলিশ চিহ্নিত করে গ্রেফতার করবে।” নিহতের স্ত্রী জানান, শুক্রবারই বাগডোগরার ভুট্টাবাড়িতে একটি জমি বিক্রি করেন তাঁর স্বামী। তিনি বলেন, “জমি বিক্রির লাভ থেকে এক লক্ষ টাকা সন্ধ্যায় পুজোর বাজার করার জন্য আমাকে দিয়েছিলেন আমার স্বামী। যতদূর জানি, সারাদিন জমি বিক্রির কাজেই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। কোথা থেকে কী হল জানি না।”

শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবারের লোকজন ও পড়শিদের সঙ্গে কথা বলেন। কমিশনার বলেন, “জমি নিয়ে গোলমালের জেরে খুন হতে পারেন রবিন বাবু। তাঁর সঙ্গে অনেক রাত পর্যন্ত ৩ জন ওই ঘরে ছিলেন বলে বাড়ির লোকেরা জানিয়েছেন। ওই তিন ব্যক্তিকে বাড়ির লোকজন চেনে না। তাঁদের শনাক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। নিহতের মোবাইল বাজেয়াপ্ত হয়েছে। সেই সূত্রেই তদন্ত এগোচ্ছে।” পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে রবিনবাবুর বাড়িতে ছিলেন তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে, ভাইঝি ও বোনপো ও তাঁর মেয়ে। বাড়ির চত্বরেই আলাদা একটি ঘরে ছিলেন বাড়ির পরিচারক দম্পতি। এদিন রাতে প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে লোডশেডিং হয়ে যায়। ফলে সাড়ে দশটার মধ্যে রাতের খাওয়া সেরে নিয়েছিলেন তাঁরা। রাত এগারোটার মধ্যে সবাই শুয়েও পড়েন। এর পরে কয়েকজন বাইরে থেকে রবিনবাবুর নাম ধরে ডাকাডাকি করতে থাকেন। তিনি বেরিয়ে গিয়ে যে তিনজন তাঁকে ডাকতে এসেছিলেন তাদের বাড়ির পেছনে অতিথিদের থাকার ঘরে নিয়ে যান। তাদের রাতের খাবারও খাওয়ান রবিনবাবু। এরপর স্ত্রী বাবলিদেবীকে শুয়ে পড়তে বলে তিনি ফের ওই ঘরে ফিরে যান। কারা ঘরে ছিলেন অন্ধকারে তাদের স্পষ্ট দেখতে পাননি বলে জানিয়েছেন বাবলি দেবী।

Advertisement

তিনি জানান, সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ ওই ঘরে গিয়ে দেখেন, রবিনবাবু রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। গলার নলি কাটা। পেটেও ধারাল অস্ত্রের কোপ রয়েছে। আততায়ীদের রক্ত মাখা জুতোর ছাপও দেখতে পান তিনি। রবিনবাবুর বড় মেয়ে রিমা বলেন, “আমরা রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ঘুমিয়ে পড়ি। তার পরে কী হয়েছে কিছুই জানি না।” রাতে বৃষ্টি হওয়াতে কোনও আওয়াজও শুনতে পাননি বলে জানিয়েছেন বাড়ির পরিচারিকা বিমলা শীল। তিনি বলেন, “সাড়ে আটটা নাগাদ রান্না করে দিয়ে বাড়ির পিছন দিকে আমি নিজের ঘরে চলে যাই। বৃষ্টি হওয়ায় তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েও পড়ি। সকালে জানলাম এই ঘটনা।”

নকশালবাড়ি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি গৌতম কীর্তনিয়ার বাড়ি ওই এলাকাতেই। তিনি বলেন, “খুনের কারণ বুঝতে পারছি না। তাঁর কোনও শত্রু থাকলেও আমরা জানি না। তবে তিনি জমি কিনে তা বিক্রি করতেন,” কারও সঙ্গে ব্যবসা সংক্রান্ত পুরানো শত্রুতার জেরে খুনের ঘটনা ঘটেছে কি না খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন এলাকার তৃণমূল নেতা তারক সরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement