মোহন বসু।
তৃণমূলে গিয়ে সরকারি প্যাকেজের আশ্বাস পেলেন জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু। গত আড়াই বছর তৃণমূল পরিচালিত সরকারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক বঞ্চনার একাধিক অভিযোগে সরব ছিল কংগ্রেসের দখলে থাকা জলপাইগুড়ি পুরবোর্ড। সোমবার কলকাতায় পুর বোর্ডের ২০০৩ সাল থেকে টানা চেয়ারম্যান পদে থাকা তথা প্রাক্তন জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহনবাবু-সহ দলের ৮ কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এর পরেই পুরসভার জন্য আর্থিক বরাদ্দের আশ্বাস দিয়েছে রাজ্য।
এ দিন দুপুর ১২টায় তৃণমূল ভবনে দলবদলের পরে, বিধানসভায় গিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মোহনবাবুর কিছুক্ষণ একান্তে কথাও হয়। এর পরে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে ঢোকেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। মোহনবাবু জানান, এদিন জলপাইগুড়ি শহরের উন্নয়নের জন্য প্রাথমিকভাবে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে শহর সৌন্দর্যায়নের প্রকল্প, শহরের ২০টি ক্লাবের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য পুরসভার মাধ্যমে ১০ লক্ষ করে টাকা বরাদ্দ, তফসিলি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রাদায়ের ২৬৫ ছাত্রীকে সাইকেল বিলির প্রকল্প মঞ্জুর হয়েছে। জলপাইগুড়ি পুরসভাকে কর্পোরেশনে উন্নতি, শহরের সড়ক সম্প্রসারণ সহ নানা প্রকল্পের আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী।
মোহনবাবু জানান, জলপাইগুড়ি শহরের উন্নয়ন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পুরমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। শহরের উন্নয়নের টাকার অভাব হবে না বলে মুখমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। উন্নয়নের যে কোনও বিষয়ে সরাসরি তাঁকে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, মোহনবাবুর সঙ্গে তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ সাহা, রিঙ্কু বসু, নিরুপমা রায়, সুশীল সিংহ, জয়প্রকাশ সাহা, রানি মাহাতো তৃণমূলে যোগ দেন। যুব আইএএনটিইউসি জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি শুভেন্দু বসুও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এ দিন দুপুরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের হাত থেকে মোহনবাবুরা দলের পতাকা নেন। তৃণমূল জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী এবং আইনজীবী সেলের নেতা গৌতম দাসও উপস্থিত ছিলেন। এরপরে সদলবল বিধানসভায় গিয়েছিলেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী, পুরমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও মোহনবাবু দেখা করেন। বিধানসভায় বনমহোৎসবে জলপাইগুড়ির পুরসভার প্রধানকে মুখ্যমন্ত্রী ডেকে নেন।
পুরসভা সূত্রের খবর, ২৫ ওয়ার্ডের জলপাইগুড়ি পুরসভায় কংগ্রেসের দখলে ছিল ১৬টি ওয়ার্ড। তৃণমূলের ১ জন এবং বামেদের ৮ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। এ দিনের দলবদলের পরে তৃণমূলের কাউন্সিলের সংখ্যা দাঁড়াল ৯। কংগ্রেসের কাউন্সিলর সংখ্যা দাঁড়াল ৮ জন। সে ক্ষেত্রে দল হিসেবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও, বোর্ড দখলের সংখ্যা থেকে তৃণমূল পিছনে রয়েছে। তৃণমূলের দাবি, জলপাইগুড়ি পুরবোর্ড তাদের দখলেই আসতে চলেছে। শীঘ্র কয়েকজন কংগ্রেস এবং বাম কাউন্সিলর দলে যোগ দেবেন। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান অবশ্য তৃণমূলে যোগ দেননি। সে ক্ষেত্রে পুরসভায় তৃণমূলের চেয়ারম্যান এবং কংগ্রেসের ভাইস চেয়ারম্যান কী ভাবে পুরবোর্ড চালাবেন, সে দিকেই এখন সকলের নজর। এ দিনের দলবদলকে অবশ্য কটাক্ষ করেছেন পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা শহর ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি পিনাকী সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। চাপের মুখে পড়ে মোহনবাবুরা দল ছাড়লেন। যে ভাবে রাজনৈতিক চাপ পুরসভার উপর তৈরি হয়েছিল, সকলে মিলে অবশ্য তার মোকাবিলা করাই যেত। তবে কংগ্রেস সময় মতোই পরবর্তী পদক্ষেপ করবে।”