Victims

অন্য মিছিল

নারীহিংসার প্রতিকার দাবি করে সাধারণত যাঁরা রাস্তায় হাঁটেন— কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, সামাজিক সংগঠনের কর্মী, নারী-অধিকার সংস্থার সদস্য, তাঁদের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই রাজপথের পদাতিক।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ১০:১২
Share:

নিরাপত্তা চেয়ে মেয়েরা মিছিল করছেন রাজধানীর রাস্তায়, এ দৃশ্য তেমন অভিনব মনে হওয়া কথা নয়, যদি না লক্ষ করা যায় কারা হাঁটছেন। নারীহিংসার প্রতিকার দাবি করে সাধারণত যাঁরা রাস্তায় হাঁটেন— কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, সামাজিক সংগঠনের কর্মী, নারী-অধিকার সংস্থার সদস্য, তাঁদের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই রাজপথের পদাতিক। যোগ দিচ্ছেন এমন অনেক মানুষ যাঁরা আগে কখনও রাস্তায় হাঁটেননি। গৃহবধূ, শিক্ষিকা, চিকিৎসক, নানা পেশার শ্রমজীবী মহিলা, সমকামী ও রূপান্তরকামী মানুষ তো আসছেনই, বহু পুরুষও এই নারীহিংসা-বিরোধী মিছিল, সমাবেশে নিয়মিত যোগ দিচ্ছেন। কিশোরী থেকে বৃদ্ধা, সকলেই হাঁটছেন। যে মেয়েরা রাজনীতিতে, সংবাদ পর্যালোচনায় অত আগ্রহী নন, তাঁরাও গত কয়েক মাসের ঘটনাক্রমের মধ্যে দিয়ে বুঝতে পারছেন যে ধর্ষণ, নিগ্রহের ঘটনাগুলি পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয়। হিংসার এক ধারাবাহিক, নিরবচ্ছিন্ন স্রোতের মধ্যে বাস করছেন মেয়েরা। এক দিকে রয়েছে গৃহহিংসা, পণের জন্য নির্যাতন থেকে মত্ত স্বামীর মারধর করে টাকা কেড়ে নেওয়া। অন্য দিকে পাচার, বেশ্যাবৃত্তিতে নিয়োগ, পর্নোগ্রাফিক ভিডিয়ো তৈরি প্রভৃতি যৌন শোষণের সুপরিকল্পিত চক্র। মেয়েদের শিক্ষা, চাকরি, স্বরোজগার, স্থানীয় স্বশাসনে যোগদান— কিছুই এই সব চিত্রের পরিবর্তন আনতে পারেনি।

Advertisement

বিশেষ করে বিপর্যস্ত করে এই তথ্য যে, নাবালিকাদের উপর যৌন অত্যাচারের ঘটনা ২০২১-এর তুলনায় ২০২২ সালে কিছুটা বেড়েছে। আত্মীয়, স্কুল-শিক্ষক, পরিচারক, যারা নাবালিকার সুরক্ষার দায়িত্বে রয়েছে, তারাই শিশুদের অবাধে ধর্ষণ-নির্যাতন করছে, এটা দেখায় যে পুরুষতন্ত্র কতখানি বিষাক্ত ও সর্বগ্রাসী। বর্ধমান, কৃষ্ণনগর থেকে জয়গাঁ পর্যন্ত শিশু ও নারীহিংসার প্রায় প্রতিটি সংবাদে দেখা গিয়েছে যে অভিযুক্তের উপরে আক্রোশের পাশাপাশি পুলিশের উপরেও ক্ষোভ আছড়ে পড়েছে আক্রান্তের পরিবার, প্রতিবেশীর। এটা অমূলক নয়। পুলিশ ও প্রশাসনের চোখের সামনেই নারীহিংসা চলছে, অথচ তার প্রতিরোধ, প্রতিকার করার বিশেষ উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি সক্রিয় ভাবে, বা নিষ্ক্রিয় থেকে, পুলিশ-প্রশাসন অভিযুক্তদেরই প্রশ্রয় দিচ্ছে, এই সন্দেহ গাঢ় হচ্ছে। কোনও মেয়ের হেনস্থার জন্য তাঁকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে দোষারোপ করা এই সমাজের দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। আর জি কর কাণ্ড, ও তৎপরবর্তী তিন মাসে নানা জেলা থেকে নারী-নিগ্রহের সংবাদ অপরাধের জঘন্যতাকে এমন নগ্ন ভাবে প্রকাশ করেছে যে, এই কুযুক্তি খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছে।

সেই জন্যই বিচারের দাবি এমন প্রবল হয়েছে। ধর্ষণ, নিগ্রহের এই ঘটনাগুলিকে সহনীয় বলে মনে করলে প্রতিটি মেয়ের বিপন্নতা আরও বাড়বে, এই চিন্তা যেন সকলকে ঝাঁকুনি দিয়ে জাগিয়ে দিয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বলছেন যে, নিজের কন্যাসন্তানের নিরাপত্তার দাবিতে তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন। এ ভাবেই মেয়েদের নিরাপত্তার প্রত্যাশা হয়ে উঠছে রাজনৈতিক দাবি। যা সরকারকে বিষাক্ত পুরুষতন্ত্রের পক্ষপাতিত্ব ছেড়ে সাম্য ও ন্যায়ের পথে হাঁটতে আহ্বান করছে, রাজধর্ম পালনের অনুরোধ করছে। হাতের পোস্টার, মুখের স্লোগান দিয়ে সাধারণ নারীপুরুষ যে এই জরুরি কথাগুলো বলছেন, এটাই এই সব মিছিলের অ-সাধারণত্ব।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement