ক্লাসরুমের মেঝেতে রক্তের দাগ। সোমবার রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।
স্কুল শুরু হবার মুখে ক্লাস রুমে ঢুকে এক ছাত্রীর পেটে ছুরি দিয়ে আঘাত করে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন এক যুবক। তাঁর নাম জিতেন্দ্র সা। সোমবার বেলা পৌনে এগারোটা নাগাদ ধূপগুড়ি থানার শালবাড়ি গ্রামের জুরাপানি হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ক্লাসে আচমকা ঢুকে পড়েন কলেজ ছাত্র জিতেন্দ্র। সেখানে ওই ছাত্রীকে আক্রমণের সময় তাঁকে বাধা দেয় ওই ক্লাসেরই এক ছাত্র। জিতেন্দ্র তাকেও ছুরি দিয়ে জখম করার পরে নিজে একটি শিশি থেকে বিষ বার করে খাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে শিশিটি হাত থেকে পড়ে যায়। জিতেন্দ্র তখন নিজের পেটেই ছুরি ঢুকিয়ে দেন।
জখম তিন জনকেই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। প্রথমে জলপাইগুড়ি ও পরে শিলিগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয় ওই যুবক ও ওই ছাত্রীকে। জখম অপর ছাত্রকে ধূপগুড়ি হাসপাতালে চিকিসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে বেলা সাড়ে বারোটা থেকে টানা এক ঘন্টা ফালাকাটা-ধূপগুড়ি সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেমস কুজুর বলেছেন, “এই ঘটনার পিছনে প্রণয়ঘটিত কারণ থাকতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।”
জিতেন্দ্রর বাড়ি শালবাড়ি গ্রামে। বয়স বছর উনিশ। জলপাইগুড়ি ল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র জিতেন্দ্রর বাবা ফল ব্যবসায়ী। ওই ছাত্রীর বাড়ি তাঁর বাড়ি থেকে সামান্য দূরে। বেশ কিছু দিন ধরে সে ওই ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছিল। সম্প্রতি ওই ছাত্রী তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে বলে জিতেন্দ্রের কয়েক জন বন্ধু জানিয়েছেন। ওই ঘটনার পরে দিন চারেক কলেজে যাওয়া বন্ধ করে বাড়ি থেকে বেরনো বন্ধ করে দেন জিতেন্দ্র। সোমবার সকাল দশটা নাগাদ কলেজে যাবার নাম করে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি।
প্রতিবাদে পথ অবরোধ বাসিন্দাদের।
এই স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন জিতেন্দ্র। তাই এ দিন তাঁকে স্কুলে ঢুকতে দেখে কারও তেমন সন্দেহ হয়নি।
সরাসরি একাদশ শ্রেণির ক্লাসে ঢুকে পড়েন তিনি। ওই ছাত্রী তখন তিন সহপাঠিনীর সঙ্গে গল্প করছিল। আচমকা জিতেন্দ্র ব্যাগ থেকে ছুরি বের করে তার দিকে তেড়ে যাচ্ছে দেখে ওই ক্লাসেরই ছাত্র সুশান্ত সরকার পিছন দিক থেকে এসে জিতেন্দ্রকে বাধা দেয়। জিতেন্দ্র তখন সুশান্তের দু’হাতে ওই ছুরি দিয়েই কোপ দেয়। আহত সুশান্ত তখন তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলে জিতেন্দ্র ওই ছাত্রীর পেটে ছুরি দিয়ে আঘাত করে।
ছুরির আঘাতের পরে ক্লাসেই লুটিয়ে পড়ে ওই কিশোরী। রক্তে ভেসে যায় এলাকা। বাকি ছাত্রীরা ওই ঘর থেকে বেরিয়ে চিৎকার করতে থাকে। সে সময় জিতেন্দ্র আত্মহত্যার চেষ্টা করে বিষের শিশি পকেট থেকে বের করে মুখে ঢালতে যায়। তখনই তা হাত থেকে পড়ে যায়। তখন হাতে রক্ত মাখা ওই ছুরি দিয়ে নিজের পেটে কোপ দেন জিতেন্দ্র। স্কুল জুড়ে হইচই শুরু হয়ে যায়। ভয়ে ছাত্রছাত্রীরা স্কুল থেকে বাড়িতে পালাতে শুরু করে দেয়। স্থানীয় লোকজন খবর পেয়ে স্কুলে ছুটে গিয়ে জখম তিন জনকে ধূপগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রধান শিক্ষক ভগীরথ রায়ের কথায়, “জিতেন্দ্র স্কুলে পড়ার সময় ভালই আচরণ করত। তবে এ ভাবে স্কুলে ঢুকে কোনও ছাত্রীকে খুন করার চেষ্টার ঘটনা মানা যায় না। স্কুলের পক্ষে আমরা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাব।”
ওই ছাত্রীর দাদার কথায়, “ওই যুবকের সঙ্গে আমার বোনের কোনও সম্পর্ক ছিল না। বিষয়টি নিয়ে কোন দিন সে বাড়িতে কিছু বলেনি।” জিতেন্দ্রের দিদি গায়ত্রীর কথায়, “ভাইয়ের মতো শান্ত ও ভাল ছেলে খুব কম রয়েছে। এখানে ও যে এই ধরনের কাণ্ড ঘটাবে তা ভাবতে পারছি না।” প্রেমে প্রত্যাখ্যাত এক যুবক সম্প্রতি ফালাকাটার এক একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী নিকিতা দত্তকে দিনে দুপুরে খুন করে। সেই ঘটনার পর পাশের ব্লকে ক্লাসে ঢুকে ছাত্রীকে হত্যার চেষ্টায় উদ্বিগ্ন এলাকার মানুষ।