শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ

আসন সংরক্ষণে পক্ষপাত, নালিশ

সর্বদল বৈঠক না করে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোটের আসন সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশ করায় আগেই বিতর্কের মুখে পড়েছিল দার্জিলিং জেলা প্রশাসন। এ বার সংরক্ষণ নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠল প্রশাসনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, একেকটি গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতে একেক রকম পদ্ধতিতে আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৪৯
Share:

সর্বদল বৈঠক না করে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোটের আসন সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশ করায় আগেই বিতর্কের মুখে পড়েছিল দার্জিলিং জেলা প্রশাসন। এ বার সংরক্ষণ নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠল প্রশাসনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, একেকটি গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতে একেক রকম পদ্ধতিতে আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তৃণমূলকে সুবিধে করে দিতেই পক্ষপাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে শুক্রবার জেলা প্রশাসনের ডাকা সর্বদল বৈঠকে জেলাশাসক পৌঁছনোর আগেই কংগ্রেস-সিপিএম এবং বিজেপির প্রতিনিধিরা বেরিয়ে যান। ব্লক স্তরে ফের সর্বদল বৈঠক ডাকার দাবি জানানো হয়। এ দিন দুপুর ১২টায় মহকুমা পরিষদে জেলাশাসক পুনীত যাদব সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন। জেলাশাসক নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টা খানেক পরে বৈঠকে যান। বিরোধী দলগুলির চাপে ব্লক স্তরে সর্বদল বৈঠক করার হবে বলে জেলাশাসক আশ্বাস দিয়েছেন। তবে স্বচ্ছভাবে সংরক্ষণ তালিকা তৈরি না করলে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার হুমকিও দিয়েছে জেলা কংগ্রেস।

Advertisement

জেলাশাসক বলেন, “রাজ্যপালকে বিদায় জানাতে গিয়েছিলাম। তাই বৈঠকে পৌঁছতে দেরি হয়েছে। লোকসভা নির্বাচন থাকায় সব দলেরই ব্যস্ততা ছিল। তাই খসড়া তৈরি করেছি। সকলের আপত্তি অভিযোগ শুনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।” এ দিন বিভিন্ন দলের আপত্তি জানানোর বিষয়ে জেলাশাসক বলেন, “নির্বাচনী প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে করতে আগামী ২৯ এপ্রিল ফের ব্লক স্তরে সর্বদলীয় বৈঠক করা হবে।” বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, তৃণমূলের দখলে থাকা আসনগুলি একই রেখে বিরোধীদের দখলে থাকা আসনগুলিকে হয় সংরক্ষিত করা হয়েছে, নয়ত সংরক্ষিত থেকে সাধারণ তালিকায় আনা হয়েছে। এ দিনের বৈঠকের শুরুতেই গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে আসন সংরক্ষণের বিস্তারিত নথি রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের দেওয়া হয়। আগামী জুন-জুলাই মাসে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সাতটি আসন সহ, ২২টি পঞ্চায়েত এবং চারটি পঞ্চায়েত সমিতিতে ভোট হওয়ার কথা। সেই মতো প্রশাসন থেকে আসন সংরক্ষণের খসড়া প্রকাশ করা হয়।

ঠিক কী কী ভাবে শাসক দলকে সুবিধে দেওয়া হয়েছে?

Advertisement

কংগ্রেসের দাবি, কোনও একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান পদ গত বারের নির্বাচনে সাধারণ তালিকায় ছিল। নিয়ম অনুযায়ী এ বার প্রধান পদ সংরক্ষিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসনের প্রস্তাবে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পদ সাধারণ রাখা হয়েছে। আরও অভিযোগ, গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দলবদল করে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ায় এই সিদ্ধান্ত। কোনও নিয়ম না মেনেই পর পর কয়েকটি আসন সাধারণ, কয়েকটি আসন সংরক্ষণ তালিকায় রাখা হয়েছে। যদিও অনান্য পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে এমন নীতি অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ।

জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, “এখনও পুরো তালিকা দেখা হয়নি, তবে যতদূর দেখেছি তাতে শাসক দলের সঙ্গে যে প্রশাসনের আলোচনা হয়েছে তা পরিষ্কার।’’ প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “সর্বদল বৈঠকে প্রতিবাদ জানিয়ে আমাদের প্রতিনিধিরা বেরিয়ে এসেছেন। আমরা যথাসময়ে ভোট চাই। তবে স্বচ্ছভাবে খসড়া তালিকা তৈরি করতে হবে। ফের সর্বদল বৈঠক করতে হবে।” সিপিএম নেতা তথা শিলিগুড়ি পুরসভার বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে বাম প্রতিনিধি দল বৈঠকে গিয়েছিলেন। কংগ্রেস-সিপিএমের সঙ্গে একই সুরে প্রতিবাদ করেছে বিজেপিও। দলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসুর অভিযোগ, “ব্লক স্তরে কোনও আলোচনা না করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।”

শাসক দল তৃণমূল অবশ্য খসড়া সংরক্ষণ নিয়ে এ দিন কোনও প্রতিবাদ না করলেও, বিরোধী দলগুলি জোট বেধেছে বলে কটাক্ষ করেছে। জেলা তৃণমূলের সাধারণ সচিব কৃষ্ণ পাল এ দিনের বৈঠকের শেষে বলেন, “খসড়া সংরক্ষণ নিয়েই আপত্তি-অভিযোগ জানাতেই এ দিনের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কংগ্রেস-সিপিএম বা বিজেপি নিজেদের বক্তব্য না জানিয়েই সভা ছেড়ে চলে গিয়েছেন। লোকসভা ভোটের আগে থেকেই ওই তিন দল একসঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করেছে।” সংরক্ষণ নিয়ে ত্রুটির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সংরক্ষণের বিস্তারিত নথি আজকেই হাতে পেয়েছি। তালিকা দেখে পরে মতামত জানাব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement